1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

বাজেট বাস্তবায়নে ১৩ ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে: সিপিডি

  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩
  • ১০৯ বার দেখা হয়েছে

চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে ১৩ ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জনও দুঃসাধ্য। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর লেক শোর হোটেলে ‘সিপিডি বাজেট ডায়ালগ-২০২৩’ শীর্ষক সংলাপে বাজেট পর্যালোচনায় এ অভিমত তুলে ধরেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সিপিডির মতে বাজেট বাস্তবায়নে ১৩টি চাপের মধ্যে রয়েছে,
১.সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত না হওয়া
২.রাজস্ব আদায়ের কঠিন লক্ষ্যপূরণ
৩.ব্যাংকিংখাত থেকে অতি ঋণ
৪.ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট
৫.মুদ্রা বিনিময় হার
৬.সরকারি ব্যয় কম হওয়া
৭.রপ্তানি আয়ের কম প্রবৃদ্ধি
৮.বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে যাওয়া
৯.অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়া
১০.খেলাপি ঋণ
১১.কম রেমিট্যান্স প্রবাহ
১২.বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট এবং
১৩.উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর নজর না দিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে সংলাপে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সংলাপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সংকটময় সময়ে চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না গেলে আগামীতে অর্থনীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করে চিন্তা করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক চাপ রয়েছে। সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার ব্যাংক থেকে ধার করছে, এতে ব্যক্তি ঋণ কমে যাবে। বিনিয়োগ রক্ষণশীল রেখে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর চাপ সহ্য করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সংকট কাটানোর কোনো উদ্যোগের কথা বলা নেই বাজেটে। উন্নয়ন ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অবস্থা বেশি ভালো নয়।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে যেসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রাগুলো উচ্চাভিলাষী। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আদায় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব লক্ষ্য বাস্তবসম্মত হয়নি। বাজেটে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়নি।

সিপিডির সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন- পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম, ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শ্রমিক নেত্রী ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সামি সাত্তার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ধারাবাহিকতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা না থাকলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কথার সঙ্গে সবাই একমত হবেন। আমরাও সে লক্ষ্যে কাজ করছি। মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। এর পেছনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় কারণ রয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে, আমরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি। বিশেষত আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত পর্যায়ের ৩০ শতাংশ মানুষের কষ্ট কমানো। এজন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।

নির্বাচনে বিশ্বাস করে না বলেই সরকার নির্বাচনী বাজেট দেয়নি- এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভোট চুরি করে যদি কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের কি জনগণের কাছে জবাবদিহি করার কোনো কারণ আছে? কোনো কারণ নেই। অনেকে বলছেন- নির্বাচনের বছরে এ বাজেট হতে পারতো নির্বাচনী বাজেট। কিন্তু নির্বাচনে বিশ্বাস নেই বলেই সরকার নির্বাচনী বাজেট দেয়নি। ইউ (সরকার) ডোন্ট বিলিভ ইন নির্বাচন। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে জোর করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে চায়। কোনো ভোট হবে না, এমন প্রক্রিয়া তো চলছে। আমি এটির নাম দিয়েছি ইলেকশন ভোট চুরির প্রকল্প।

তিনি বলেন, দুনিয়ার কোথাও পাবেন না, বাংলাদেশে কিন্তু ভোট চুরির প্রকল্প আছে। সে প্রকল্পের অংশ হিসেবে জনগণকে জেলে যেতে হবে। বিরোধীদলের নেত্রীকে জেলে পাঠানো হবে। ৪০ লাখ মিথ্যা মামলা দিতে হবে। গুম-খুন করতে হবে, পুলিশের কাস্টডিতে মরতে হবে, প্রতিদিন গ্রেফতার করতে হবে, ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সে প্রজেক্টই এখন চলমান।

সিপিডির সংলাপে জ্বালানি সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা শহরে কিছুটা অবস্থা ভালো হলেও গ্রামের অবস্থা ভয়ংকর। এরকম অবস্থা বাজেট এড্রেস করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বড় বাজেটে সরকার খুশি, কিন্তু আমরা আতঙ্কগ্রস্ত। কারণ, বড় বাজেটে বড় অভিঘাতের শিকার হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশের আর্থিক খাতে আস্থার সংকট। এটি ব্যাংকিং এবং শেয়ারবাজার উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ গত ৫০ বছরের যতটা বাড়েনি, গত এক বছরে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণ জোগান দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেটি ঠিক হবে না। তবে রিজার্ভ সংকট কাটাতে পাইপলাইনে জমে থাকা ঋণের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাড়ানো যেতে পারে।

বাজেটের আগে আয়কর আইন পাসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বাজেট পাসের আগে আয়কর আইন পাস করা হচ্ছে। এটি সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আইনের সঙ্গে অর্থবিলের সম্পর্ক নেই। কেন এটি করা হচ্ছে, আমার বোধগম্য নয়।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সংলাপে শ্রমিক নেত্রী তাসলিমা আখতার বলেন, মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ১০ শতাংশের ওপরে। সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানোর কথা বলা হয়েছে। মালিকরা কর ও ব্যবসায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও শ্রমিকরা বঞ্চিত। শ্রমিকের স্বার্থে সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ না কমিয়ে বাড়ানো দরকার।

আয়কর আইনে এনজিওকে কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করার কঠোর সমালোচনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, অবাক বিস্ময়ে, হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করলাম কোম্পানি অ্যাক্টে পরিবর্তন আনা হলো। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, সমিতি, নট ফর প্রফিট সবকিছুই ঢুকে গেছে। প্রতিটি আইনে তো একটি স্পিরিট থাকে। কোম্পানি অ্যাক্টে কী করে নট ফর প্রফিট কোম্পানি ঢুকে গেল। আজ সেটি সংসদে তোলা হচ্ছে। এটা কী করে হলো, কার মাথা থেকে এসেছে জানি না, কী লাভ হবে?

এসময় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনী বছরে এ ধরনের পদক্ষেপ হতে পারে না। এটি কোনো রাজনীতির মধ্যে পড়ে না। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার সুযোগ রয়েছে। এটি একটি অবৈজ্ঞানিক, অরাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক পদক্ষেপ। যা এসডিজি বাস্তবায়ন ও এফডিসির উত্তরণ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ