স্বাস্থ্য ডেস্ক : দেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ যক্ষ্মা (টিবি)। এখনও রোগটিতে প্রতিবছর ৪২ হাজার মানুষ মারা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যক্ষ্মা রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
যক্ষ্মার বিনামূল্যে চিকিৎসার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কথা হয় রাজধানী ঢাকার শনির আখড়ায় বসবাসকারী দিনমজুর আলী হোসেনের সঙ্গে। আলী হোসেনের বয়স এখন ৪৫। তার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কানকিরহাট এলাকায়। গ্রামে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন, ঢাকায় এসেছেন আয় বৃদ্ধির আশায়।
আলী হোসেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন বছর দুয়েক আগে। প্রথমে কাশি হয় এবং সেটা অনবরত চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকারি ক্লিনিকে যান। সেখানে পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত।
প্রথমে তিনি খুব আতঙ্ক বোধ করেন, চিকিৎসার খরচ নিয়েও দুশ্চিন্তা বোধ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তিনি এটি পরিবারের কাছে প্রকাশ করবেন না। যদিও পরবর্তীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় এসে তার অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা কেটে যায়।
আলী হোসেন জানান, যক্ষ্মার বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে তার মনে প্রথমে কিছুটা দোটানা ছিল। কিন্তু বিনামূল্যে চিকিৎসার উপকার ভোগের পর তার সেই সংশয় কেটে যায়। আলী হোসেনের মতো বাংলাদেশের অনেকেই যক্ষ্মার বিনামূল্যে চিকিৎসার উপকারভোগী।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের একটি আর্টিকেলে বলা হয়, বাংলাদেশে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) যক্ষ্মা তহবিলের একটি বড় অংশ আসে গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া (জিএফএটিএম) থেকে। যক্ষ্মা রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা পায়। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টি সহায়তাও দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের তথ্যমতে, বাংলাদেশ বিনামূল্যে যক্ষ্মা চিকিৎসা দিচ্ছে। বাংলাদেশে যক্ষ্মা ওষুধ তৈরি হচ্ছে এবং সুখবর হলো চিকিৎসার মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছে।
এনটিপি, এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই রোগ মোকাবিলায় যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। সকল বিভাগীয় পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এনটিপি বিগত কয়েক বছরে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় সাফল্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুস শাকুর খান বলেন, যক্ষ্মার বিনামূল্যে চিকিৎসার স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। বিনামূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসা এখন মানুষের হাতের নাগালের মধ্যেই। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে এর চিকিৎসা। আর সারাদেশে ১১০০ এর বেশি ডটস সেন্টারে পাওয়া যায় বিনামূল্যে ওষুধ।
বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যক্ষ্মার বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের কথা আরো বহুভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। যক্ষ্মা চিকিৎসার সহজলভ্যতার কথা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। তারা আরো বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের জন্য, সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারলে বাংলাদেশকে যক্ষ্মা মুক্ত করা সম্ভব।