নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকার ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছে, তাতে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ভাবা হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এ বন্দর নির্মাণের কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে নতুন স্বপ্নের সূচনা হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠছে এই মহেশখালী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) থেকে অধিগ্রহণ করা চ্যানেলটি চালুর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০২৬ সালে মাতারবাড়ী বন্দরের কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন। সেদিন ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি এবং ১৮.৫ মিটার ড্রাফ্টসহ (জাহাজের নিচের অংশ) ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি বহুমুখী জেটি এবং একটি কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দরের অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ শুরু হবে। এ উন্নয়নের ফলে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি জেটিতে প্রবেশ করতে পারবে।
সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলটি সিপিএ’র চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহেলের কাছে হস্তান্তর করেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে ১ হাজার ৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিতব্য এ বন্দর উদ্বোধন হলে পাল্টে যাবে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতাসম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমুদ্রপথে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ নটিক্যাল মাইল। কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী ধলঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সাগর থেকে উপকূল পর্যন্ত পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁধ। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকায় চ্যানেলের পানি পুরো নীল। দেশের আর কোনো বন্দরে এমন নীল পানি নেই। নীল পানি থাকা মানে নৌপথের বড় অংশে পলি জমার আশঙ্কা কম।
ইতোমধ্যে বন্দরের নিরাপত্তায় উত্তর ও দক্ষিণ দিকে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রের ঢেউ প্রতিরোধ বাঁধ। এছাড়া, জেটি নির্মাণ, জাহাজ হ্যান্ডেলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও টাগ বোট ক্রয়সহ তিনটি প্যাকেজে ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হবে।
মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে অন্যান্য বন্দর থেকে এর দূরত্ব বেশি হবে না। পায়রা বন্দর থেকে মাতারবাড়ীর দূরত্ব ১৯০ নটিক্যাল মাইল ও মোংলা বন্দর থেকে গভীর সমুদ্রবন্দরের দূরত্ব ২৪০ নটিক্যাল মাইল। তাই, মাতারবাড়ীতে মাদার ভেসেল (বৃহদাকার কনটেনার জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস করে অল্প সময়ের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্র পথে অন্যান্য বন্দরে পণ্য পরিবহন করা যাবে।
পুরোদমে মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। গভীর সমুদ্রবন্দর জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, মাতারবাড়ী গভীরসমুদ্র বন্দর দৃশ্যমান হয়ে গেছে। আগামী জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণকাজ শুরু হবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। এতে অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফলাইন, মাতারবাড়ী বন্দরও অর্থনীতির প্যারালাল লাইফলাইন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ এখনকার স্মার্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গত এক মাসে পশ্চিমা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ দেশে এসেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা জেনে গেছেন।