জেলা প্রতিনিধি, পাবনা : পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রানা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আরেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপহরণের পর অভিযান চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাব্বির হোসেনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান রানাকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। সাব্বির হোসেন (৩০) পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার বৃ-লাহীরিবাড়ী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
আটক মেহেদী হাসান রানা (৩৫) ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের সারুটিয়া মহল্লার মৃত জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক ও চুরির মামলা রয়েছে।
অন্য অভিযুক্ত সজীব ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের কালিবাড়ি মহল্লার মোজাহার হোসেনের ছেলে ও হিমেল ভদ্রপাড়া মহল্লার রফিজ উদ্দীনের ছেলে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাব্বির হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ফরিদপুর থানায় মেহেদী হাসান রানা, সজীব হোসেন ও হিমেল আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনের নামে মামলা করেছেন।
মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেহেদী হাসান রানা, সজীব ও হিমেলসহ ৫/৬ জন যুবক তিনটি মোটরসাইকেলে ফরিদপুর উপজেলার বৃ-লাহীরিবাড়ী ইউনিয়নের দেওভোগ গ্রামে গিয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সাব্বিরকে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী বলে মোটরসাইকেলে তোলার চেষ্টা করেন।
এ সময় সাব্বির চিৎকার দিলে তাকে চেতনানাশক স্প্রে করে মোটরসাইকেলে তুলে ভাঙ্গুড়া পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে আব্দুল আলীমের ফাঁকা বাড়িতে আটকে রাখে। সেখানে সাব্বিরকে মারধর করে তার মোবাইলে বিকাশে থাকা ৫০০০ টাকা ক্যাশ আউট করে নেয়। এছাড়া সাব্বিরের মোবাইল থেকে তার বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য আর পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ওই বাড়িতে আসতে বলে।
তখন সাব্বিরের পরিবার বিষয়টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রিপন আহমেদকে জানায়। রিপন আহমেদ ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া থানায় যোগাযোগ করলে ভুয়া ডিবি পুলিশ সেজে সাব্বিরকে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর রিপন আহমেদ এবং ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর সহ ২০/২৫ যুবক ভাঙ্গুড়ায় আব্দুল আলীমের বাড়িতে এসে পুলিশের সহযোগিতায় সাব্বিরকে উদ্ধার করেন। এ সময় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মেহেদী হাসান রানাকে আটক করে পুলিশ। তার অন্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়। ওই বাড়িতে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিও পাওয়া যায়।
আটকের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের অভিযুক্ত মেহেদী হাসান রানা বলেন, ‘আমি সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে এসেছি। ডিবি পরিচয় দেইনি।’ মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপহরণের বিষয়ে রানা বলেন, ‘আগে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন আমি ভালো হয়েছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু বলেন, ’ঘটনাটি শুনেছি। সংগঠন করে কেউ মাদক ব্যবসা, অপহরণের মতো অনৈতিক কাজে জড়িত থাকাটা দুঃখজনক। তার কারণে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দ্রুতই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃলাহীরিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রিপন আহমেদ বলেন, ‘কি ভয়ংকর ব্যাপার। স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন নেতা দিনের পর দিন সাংবাদিক ও প্রশাসন পরিচয় দিয়ে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করছে। প্রশাসনের কাছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।’
ভাঙ্গুড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ অপহৃত সাব্বিরকে উদ্ধারের পর ফরিদপুর থানায় হস্তান্তর করেছে। অপহরণের ঘটনাটি ফরিদপুর থানা এলাকায় হওয়ায় সেখানে মামলা হয়েছে। তবে মেহেদী হাসান রানার বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাদক ও অপহরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মেহেদী হাসান রানাসহ কয়েকজনকে আসামি করে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে। রানাকে শনিবার (১১ নভেম্বর) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।