লাইফস্টাইল ডেস্ক : রাজধানী কিংবা বড় শহরে বাড়ি বানাতে পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। রাজধানীতে বাড়ি করা ব্যয়বহুলও বটে। নিজের একটি বাড়ি হবে, এই স্বপ্নপূরণে অনেকে ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু ফ্ল্যাট কিনে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়। ভেঙে যায় স্বপ্ন। বিশেষ করে মধ্যবিত্তের ভোগান্তি যেন সবচেয়ে বেশি। টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার পর কাজ না করেই অনেক প্রতিষ্ঠান সটকে পড়ে। অনেকে আবার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও গ্রাহককে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেন না; গড়িমসি করেন। আবার অনেকে দাবি করেন অতিরিক্ত অর্থ। এ অবস্থায় গ্রাহক উপায়হীন হয়ে পড়েন। মানসিক এবং আর্থিক দুদিক থেকেই তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আপনার যদি আগে কোনো স্থাবর সম্পদ কেনার অভিজ্ঞতা না থাকে, সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাট দেখার পরপরই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পেপারওয়ার্ক যাচাই করে নিন। অর্থাৎ আগে তারা কোথাও ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে কি না, করলে কোথায় বা কার কাছে করেছে বিষয়গুলোরে খোঁজ নিন। তাদের কাছে বিল্ডিং প্ল্যান পাস করানো আছে কি না খতিয়ে দেখুন। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হয়ে নিন, জায়গাটি কি আসলে ওই বিল্ডার্স কোম্পানির কি না? স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে মোটামুটি নিশ্চিত হতে পারবেন।
ডেভেলপারদের কাছ থেকে নথিপত্র নিয়ে দেখে নিন তারা কি ভূমিস্বত্বের অধিকারী, না কি অন্যের জমিতে কেবল বাড়ি বানিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। যে জায়গাটিকে আপনার চিরস্থায়ী বসতি বানানোর পরিকল্পনা করছেন, তার মালিকানা পাওয়া নিয়ে কোনোরকম ছাড় দেবেন না। প্রয়োজনে জমি নিয়ে কাজ করেন এমন একজন আইনজীবী সঙ্গে রাখুন।
যদি অন্য কারো ব্যক্তি মালিকানায় থাকা জমি কিনতে চান, তবে নিশ্চিত হয়ে নিন জমিটি কোনো ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া আছে কিনা। বন্ধকি জমির ক্ষেত্রে ‘রিলিজ সার্টিফিকেট’ বা ছাড়পত্র গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি। তাছাড়া এক জমি একাধিক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করাও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কিছু নয়।
খোঁজ নিন প্রজেক্টে কোন ব্যাংক অর্থলগ্নি করছে। আজকাল আক্ষরিক অর্থেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে একের পর এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায় যে, এদের অনেকেই কাজ শুরু করার পর নগদ অর্থের অভাবে কাজ থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়। দিনের পর দিন তখন অর্ধসমাপ্ত বা অসমাপ্ত বাড়িগুলো রাস্তার পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় অসমাপ্ত ওই বাড়ির কাঠামো দেখিয়েই আপনাকে একটি ফ্ল্যাট গছিয়ে দেওয়ার ধান্দা করতে পারে তারা। আপনাকে হয়তো তখন বলবে, ফ্ল্যাট কিনলে ব্যাংক আপনাকে হাউজ লোন দেবে।
এ ধরনের ভুঁইফোড় কোম্পানি থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের প্রলোভনে পা দেওয়া যাবে না। কাজেই ফ্ল্যাট কেনার আগে ওই এলাকায় বা সংশ্লিষ্ট রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে আর্থিক সহায়তা দিতে ইচ্ছুক এমন ব্যাংকের তালিকা জেনে নিন। ডেভেলপার বা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কোনো ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত কি না খবর নিন। এ সময় নিজে গিয়ে কথা বললে কোন ব্যাংক সবচেয়ে কম সুদে হাউজ লোন বা প্রপার্টি লোন দিচ্ছে, আপনি জানতে পারবেন।
ফ্ল্যাট কেনার আগে কিছু আইনি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আঞ্জুমান আরা লিমা।
এই আইনজীবী বলেন, আমরা যেসব ডেভেলপার বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ফ্ল্যাট কিনতে যাই এরা আসলে কতটা ভালো এসব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। আপনার কষ্টের টাকা আপনি কোথায় খরচ করছেন এ ব্যাপারে জানা জরুরি। বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট বিক্রি করছে এরা সবাই রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর মেম্বার। আপনি যাদের কাছে ফ্ল্যাট কিনছেন তারা রিহ্যাবের মেম্বার কিনা আগে জানতে হবে। যদি এরা রিহ্যাবের মেম্বার না হন তবে এদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন নেই। কারণ পরে ঝামেলা হলে আপনি কোর্টে গিয়ে মামলা করতে পারবেন কিন্তু রিহ্যাবের সদস্য যদি তারা হয়ে থাকে যাদের আপনি ফ্ল্যাট কেনার জন্য অর্থ দিয়েছেন তখন একটু হলেও সুবিধা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাট কেনার সময় সবার আগে প্রতিষ্ঠান রেজিস্টার্ড কিনা দেখা উচিত। যদি রিহ্যাবের মেম্বার হয় তবে তাদের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকবে। তাদের নাম্বার সংগ্রহ করে রিহ্যাবে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করুন ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো অভিযোগ আছে কি না? প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। তারা বাজারে কত দিন হলো ব্যবসা করছে। তাদের কতগুলো প্রজেক্ট বর্তমানে চলমান রয়েছে। তারা সময়মত ফ্ল্যাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছে কি না- এ সব ব্যাপারে খোঁজ নেবেন।
কষ্টের টাকায় ফ্ল্যাট কেনার আগে এসব বিষয় মাথায় রাখলে পরবর্তী সময়ে ঝামেলা পোহাতে হবে না। অনেক সময় দেখা যায় ডেভেলপার ৮০ শতাংশ কাজ করে ২০ শতাংশ কাজ ক্রেতার উপর চাপিয়ে দেন বা অন্যান্য হিডেন চার্জ দেখান, ফ্ল্যাট কেনার আগে অবশ্যই সব বিষয়ে লিখিত চুক্তিপত্র করে নিতে হবে, -বলেন আঞ্জুমান আরা।