1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৬ অপরাহ্ন

ঘুষ না দেওয়ায় সাত স্টাফকে চাকরিচ্যুত

  • আপডেট সময় : সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩
  • ২৫১ বার দেখা হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের ৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুতদের অভিযোগ, ঘুষ না দেওয়ায় এবং অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ঘুষ চাওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও ফাঁস হয়েছে।

চাকরিচ্যুতরা হলেন, মহানগরীর বড়বাড়ী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফিন্ড সুপারভাইজার সাখাওয়াত হোসেন, একই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যাসেঞ্জার কাম গার্ড আব্দুল বারী, সালনা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ল্যাব টেকনোলজিস্ট সোহেল রানা, একই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সার্ভিস প্রমোটার মিঠু রোজারিও, কাশিমপুর মোজারমিল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এসিস্ট্যান্ট রিনা আরা খানম, কোনাবাড়ী নগর মাতৃসদন আয়া কেন্দ্রের ঝর্ণা বেগম ও একই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যাসেঞ্জার কাম গার্ড আবুল হোসেন।

চাকরিচ্যুতদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচিতে তারা কর্মরত ছিলেন। গত পাঁচ মাস ধরে এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিচ্ছে না। বেতন না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের তিন মাসের বেতন পাঠানো হয়। কিন্তু প্রকল্প ব্যবস্থাপক বৃষ্টি কর্মকার, ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার ও আইটি অফিসার মাহবুব আলম সেই টাকা দিতে গড়িমসি করে। তারা ৩ মাসের বেতনের মধ্যে ১ মাসের টাকাই ঘুষ হিসেবে চায়।

চাকরিচ্যুতরা বলেন, তিন মাসের বেতন আসলেও দুই মাসের বেতন নিতে হবে। একমাসের টাকা তারা ঘুষ হিসাবে দাবি করে। কিন্তু আমরা সেই টাকা দিতে অস্বীকার করি। তবে অনেকেই কেউ এক মাস, কেউবা বেতনের অর্ধেক টাকা ঘুষ দিয়ে বকেয়া বেতন তুলে নেয়। কিন্তু আমরা সাতজন টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে আমরা মেয়র, প্রকল্প পরিচালক ও সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

সম্প্রতি টাকা লেনদেনের মূলহোতা প্রকল্পের আইটি অফিসার মাহবুব আলমের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। সেখানে মাহবুব এক নারী কর্মীকে ফোন দিয়ে বলেন, আমি তোমার দুইটা পায়ে ধরে রিকোয়েস্ট করতাছি, তুমি চাইলে ঘটনাটি শেষ করতে পারো। তুমি যদি মনিটরিং অফিসার ও অন্যদের বলো, টাকা পয়সা চাওয়ার যে চিঠি লিখেছি সেটি আমরা লিখি নাই। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তারা চিঠি লিখেছে। অন্তত আমার জন্য তুমি যদি মিথ্যা কথাটা বলো তাহলে আমি সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। এর জন্য আমি তোমার এক বছর গোলামিও খাটবো। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর নগরীতে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পটি পায় ‘প্রগতি সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান এবং পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠিানের প্রেসিডেন্ট নাসির হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে গাজীপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাত কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ২০ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করার নোটিশ দেওয়া হয়।

ওই নোটিশে তাদের জানানো হয়, আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালনে অনীহা, অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তৃতীয় পক্ষের নিকট প্রকাশ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও স্টাফ ও ফিজিশিয়ানের সঙ্গে অসভ্য আচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেন্টারে আগত কিশোরীদের বিভিন্ন অজুহাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমতাবস্থায় চাকরির ৬ ও ৯ নং ধারা মোতাবেক আপনাকে ২৫ অক্টোবর অপরাহ্ন থেকে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। আপনাকে আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব ফিজিশিয়ানের নিকট বুঝিয়ে দিয়ে ছাড়পত্র গ্রহণের জন্য বলা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে আরবান হেলথ প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন ম্যানেজার আব্দুস সাত্তারকে শোকজ করা হয়। সেই সময় তিনি বড় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আবারো দায়িত্বে বহাল থাকেন। পরবর্তীতে তিনি আবারও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এবারও তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হবে না। এর আগেও যখন অভিযোগ উঠে তখনও আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পায়নি।

কোনাবাড়ী নগর মাতৃসদন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যাসেঞ্জার কাম গার্ড আবুল হোসেন বলেন, আমার বেতন ছিলো ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। আমি তিনমাস ২৫ দিন কাজ করছি। কিন্তু এক টাকাও পাইনি। বেতন চাইতে গেলে তারা আমার কাছে একমাসের টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি দিতে রাজি হইনি।

মহানগরীর বড়বাড়ী নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফিল্ড সুপারভাইজার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিন মাসের বেতন পেতাম। সেই টাকা যখন আসে তখন বৃষ্টি কর্মকার, আব্দুস সাত্তার ও আইটি অফিসার মাহবুব আলম মিলে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত সকলকে বলেন, একমাসের বেতন কম নিলে বাকি দুই মাসের টাকা দেওয়া হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই পুরো মাসের আবার অনেকেই অর্ধেক মাসের টাকা কম নিয়ে বেতন তুলে নেয়। কিন্তু আমারা আমরা প্রতিবাাদ করায় চাকরিচ্যুত করা হয়।

প্রকল্পের চিকিৎসক বৃষ্টি কর্মকার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আর তাদের আমি চাকরিচ্যুত করিনি, তাদের চাকরিচ্যুত করেছে আমাদের এনজিও প্রকল্প।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, চাকরিচ্যুতদের অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ