জেলা প্রতিনিধি, যশোর : স্বামীর সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজের যমজ সন্তানদের ডোবায় ফেলে হত্যা কারার অভিযোগ উঠেছে এক মায়ের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জেলার কেশবপুর পৌর এলাকার সাহাপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। পরে পুলিশ অভিযুক্ত মা সুলতানা ইয়াসমিনকে আটক করে।
অভিযুক্ত সুলতানা ইয়াসমিন একই এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন (অপরাধ) জানান, দুই বছর আগে সুলতানা ইয়াসমিনের সঙ্গে আবু বক্কর সিদ্দিকের বিয়ে হয়। তাদের আগে বিয়ে ছিল। সুলতানা ইয়াসমিনের প্রথম পক্ষের একটি কন্য সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুলতানা ইয়াসমিন বুঝতে পারেন তার স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিক অন্য নারীতে আসক্ত। তাই তিনি স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করেন। পরে তার গর্ভে সন্তান আসে। সন্তান আসার পর থেকে আবু বক্কর সিদ্দিক আরও বেপরোয়া জীবনযাপন করতে শুরু করেন। এ সময় সুলতানা ইয়াসমিন চিন্তা করেন তাদের সন্তান ভূমিষ্ট হলে হয়তো স্বামীর স্বভাবের পরিবর্তন হবে।
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে কেশবপুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে সুলতানা ইয়াসমিনের জমজ সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে একটি ছেলে এবং অন্যটি মেয়ে। জন্মের পর শিশু দুটির বিভিন্ন শারীরিক জটিতলা দেখা দেয়। পরে তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে আসেন সুলতানা ইয়াসমিন।
ছেলে সন্তানের ফুসফুস ও রক্তসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে তাকে কেশবপুরের এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু ছেলেটি সুস্থ না হওয়ায় গতকাল তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় ছেলেটিকে খুলনা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সুলতানা ইয়াসমিন ছেলেকে মৃত ভেবে বাড়ির সামনের দক্ষিণ পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করেন। পরে ঘরে ফিরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে মেয়ে সন্তানটিকেও সবার অগোচরে একই ডোবায় নিক্ষেপ করেন।
ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না বলে সবাইকে জানান। পরবর্তীতে পরিবারের লোকজন বাচ্চা দুটিকে খোঁজা শুরু করেন। নবজাতকদের নানা আব্দুল লতিফ থানায় ফোন করে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশকে জানান। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে বাড়ির দক্ষিণ পাশের ডোবায় প্রথমে ছেলে ও পরে একই ডোবা থেকে মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, যমজ সন্তানদের মৃত অবস্থায় উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় সুলতানা ইয়াসমিন সবার অগোচরে সন্তানদের ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।