নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক সম্ভাবনা খাত হিসেবে চিহ্নিত। তবে দিন দিন এই খাতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। আর উৎপাদন খরচ বাড়ার বড় কারণ হচ্ছে ফিড মিল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানজনিত ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের পরিবর্তে তুলনামূলক বেশি দামে তেল দিয়ে জেনারেটর চালানো। এ অবস্থায় সাশ্রয়ী জ্বালানী ব্যবহার করে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফিড মিল স্থাপন করা প্রয়োজন।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘পোল্ট্রিটেকবাংলাদেশ হোস্টস ফিড মিলিং ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর আওতায় পোল্ট্রিটেকবাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রাণিখাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভান আরসেন ইন্টারন্যাশনাল বুধবার (২৯ নভেম্বর) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র পলিসি উপদেষ্টা হারুনি ওসমান, একই দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি সারা ভান হোবে, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ম্যাথিস ব্রিনেন, ওয়ান হেলথ পোল্ট্রি হাব বাংলাদেশের গবেষণা ম্যানেজার ডা. রাশেদ মাহমুদ, দেশীয় কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর পরিচালক জাহেদুল আমিন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে কাজী গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আফতাব গ্রুপ, প্যারাগন, প্রভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জনেরও অধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন। পোল্ট্রি খাতে সমস্যা, করণীয় ও সুপারিশসমূহ ঠিক করতে এই খাতের স্টেকহোল্ডার ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্স এর সিনিয়র বিজনেস কনসালট্যান্ট ও প্রজেক্ট ম্যানেজার দীপা সুলতানা।
অনুষ্ঠানে ভান আরসেনের পক্ষ থেকে ‘ফিড মিলে জ্বালানি সক্ষমতা’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ভান আরসেন ১৯৪৯ সাল থেকে প্রাণিখাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও প্রস্তুতকারী আধুনিক ফিড মিল স্থাপনে কাজ করছে। বিশ্বের ৪০টি দেশে এই রকম ফিড মিল রয়েছে। এই মিলের মাধ্যমে হাঁস-মুরগিকে মানসম্মত ও নিরাপদ খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে। বাংলাদেশেও এটি ব্যাপকভাবে চালু করা হলে তুলনামূলক কম দামে খামারে পোল্ট্রি খাবার (ফিড) সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে দি ওয়ান হেলথ পোল্ট্রি হাব এর পক্ষ থেকে একটি গবেষণা সমীক্ষা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, নিরাপদ ও অধিকতর টেকসই পদ্ধতিতে পোল্ট্রি উৎপাদন ও সঠিকভাবে বাজারজাত করলে তা মানুষ ও প্রাণির বিভিন্ন রোগ-বালাই কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আলোচনায় পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসে। এগুলো হচ্ছে- সাম্প্রতিক সময়ে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, বাজারে মুরগি ও ডিমের দামে অস্থিতিশীলতা, প্রান্তিক খামারিদের সহজে ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, আপদকালীন প্রণোদনা না থাকা, কাঁচামাল ও পণ্য আমদানিতে বেশি শুল্ক আরোপ ইত্যাদি।