লাইফ স্টাইল ডেস্ক : চাষের মধু নাকি প্রাকৃতিক মধু, চেনা বড় কঠিন। অনলাইনে এখন অনেক রকম মধুর বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিশেষ করে শীতকালে মধুর বেচা-বিক্রি বেশি। কারণ এখন সরিষা ফুলের মৌসুম। হলুদ সরিষা ক্ষেত থেকে মধু আহরণের সময় এখন।
আমাদের দেশে সরিষা ফুল থেকেই সবচেয়ে বেশি মধু উৎপাদন করা হয়। এমনকি অল্প পরিমাণে বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে সরিষা ফুলের মধু। ক্রেতারা সাধারণত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধুর খোঁজ করেন। এতো এতো মধুর ভিড়ে সেই মধু পাওয়া বেশ কঠিন।
অথচ প্রাকৃতিক মধুর সেরা উৎস সুন্দরবন। মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সারাদেশে বিক্রি হয় সেই মধু। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে গ্রামে যে মৌমাছির চাক দেখা যায় সেখান থেকে খুব কম পরিমাণে মধুর যোগান পাওয়া যায়। সুন্দরবনে অন্তত সাত রকম ফুলের মধু হয়ে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশে চাষ করা মধুর মধ্যে পাঁচ রকম ফুলের মধু বেশি দেখা যায়।
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু
মার্চ মাস থেকে সুন্দরবনে ফুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে মধু আহরণের জন্য সুন্দরবনে আসতে থাকে মৌমাছির ঝাঁক। আর মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয় মৌয়ালদের।
পহেলা এপ্রিল থেকে মধু কাটা শুরু হয়। দুই মাস পর্যন্ত মধু কাটার অনুমতি থাকে। সুন্দরবনে প্রথমেই আসে খলিশা মধু। খলিশা নামক এক প্রকার গাছের সাদা ফুল থেকে মৌমাছিরা এই মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা করে। যখন সুন্দরবনে খলিশা গাছে ফুল ফোটে তখন অন্য সব গাছে মুকুল থাকলেও ফোটে না।
ভিন্ন স্বাদ ও একক ফুলের মধু হিসেবে এই মধুটির চাহিদা বেশি কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন কম। খলিশা মধুর পর আসে গরান ফুলের মধু। যা একটু লাল রংয়ের হয়ে থাকে। গরান মধু সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে ও বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করা হয়।
এরপর একে একে পশুর, কেওড়া ও বাইন ফুলের মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা। জুন মাসের দিকে মৌসুম শেষ হয় গেওয়া ফুলের মধু দিয়ে। সুন্দরবনের এই খলিশা ফুলের মধু সবার আগে আসে ও এর চাহিদাও বেশি। এছাড়া আরেকটি হয় মিশ্র মধু। যা মূলত বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু।
মধু সংগ্রহের পর তা রিফাইন করে সংরক্ষণ করেন ব্যবসায়ীরা এবং সারা বছর ধরেই সেটি বাজারে পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি হয় এসব মধু।
তবে এখন সুন্দরবন অঞ্চলেও মধুর চাষ হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে মৌমাছির বাক্স নিয়ে যায় চাষীরা, এরপর মৌসুম শেষে মধু সংগ্রহ করে ফেরে। এ সব মধুরই রঙ, স্বাদ ও গন্ধ ভেদে পার্থক্য থাকে। ঘনত্বও কম বেশি হতে পারে।
চাষের মধু
সরিষা ক্ষেতের পাশে এখন অনেক জায়গায় কাঠের বাক্স চোখে পড়ে। যেগুলোর মধ্যে মূলত মৌমাছি থাকে, তবে এগুলো পোষা মৌমাছি বলা যেতে পারে। যারা সারাদিন ফুলে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আবার বাক্সে ফেরত আসে।
মধু চেনার উপায়
গবেষকরা বলেন, মধু চেনার উপায় হল তিনটা।স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ।
সুন্দরবনের মধুতে একটা বুনো গন্ধ থাকে। একেক ফুলের মধুর ঘ্রাণ একেকরকম। খেতে গেলে বরই, লিচু এগুলোর ঘ্রাণ চলে আসে।
মধু জমে গেলে খাঁটি না এই ধারণাটি ভুল। আর মধু পানিতে মেশে কি মেশে না এটা মধুর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। সুন্দরবনের মধু সাধারণত জমবে না, ফ্রিজে থাকলেও না – বরং ঘনত্ব বাড়বে।
খাঁটি মধু পরিশোধন ছাড়া রেখে দিলে উপরে অনেকটা ফেনার মতো একটা স্তর পরে, যা ভেজাল মধুতে হয় না।
মধু চেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হল ল্যাব টেস্ট। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুবিধা খুব একটা নেই।
মনে রাখতে হবে, বেশি দিন ফ্রিজে রাখলে মধুর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মধু যতোটা সম্ভব টাটকা খাওয়াই ভালো। আর ৩-৪ মাস পর সব মধুই লাল বর্ণ ধারণ করে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি