জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : স্বামী মামুন তালুকদার পেশায় গাছ কাটা শ্রমিক। খুবই সামান্য আয়ে সংসার চালাতেন তিনি। ফলে তার সংসারে সবসময় অভাব লেগেই ছিল। মেয়েকে লালন পালন করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল মামুন তালুকদারের স্ত্রী আঁখি বেগমের (১৮) জন্য। অভাব থেকে বাঁচতে তাই ৯ মাসের মেয়ে আফিয়াকে হারপিক পান করান তিনি। এতে আফিয়ার মৃত্যু হয়। আঁখি বেগম নিজেও করেছেন আত্মহত্যার চেষ্টা। গুরুতর অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল শনিবার রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ঘটনা এটি।
ওসি খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, সংসারে লেগে থাকা অভাব নিয়ে মামুন তালুকদারের সঙ্গে স্ত্রী আঁখি বেগমের মনোমালিন্য চলছিল। স্বামী-স্ত্রীর নিয়মিত ঝগড়া হতো। রাগে ও ক্ষোভ গতকাল শনিবার রাতে আঁখি বেগম প্রথমে তার ৯ মাসের মেয়ে আফিয়াকে হারপিক পান করান। পরে নিজেও হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে প্রথমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়ে আফিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। মা আঁখি বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ বিকালে শিশুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। অভিযোগ করলে অথবা তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, হাসাপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। মায়ের অবস্থা শংকা মুক্ত ছিল না। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল শনিবার রাতেই গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ২ বছর আগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের নূর আলম শেখের মেয়ে আঁখি বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মামুন তালুকদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মামুন তেমন কাজ করতেন না। মাঝে মধ্যে গাছ কাটা শ্রমিকের কাজ করলেও অধিকাংশ সময় বেকার সময় কাটাতেন। তাই সংসারে অভাব লেগেই ছিল। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ ও মনমালিন্য চলছিল। দারিদ্রতার মধ্যেই ৯ মাস আগে এই দম্পতির একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তারপরও মামুন তালুকদার বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করেনি। বসে না থেকে আয় বৃদ্ধির কথা বললেই স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হতো।