নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার। এরই মধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন- জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সবশেষ ৮.০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, রিভার্স রেপো রেট (এসডিএফ) বৃদ্ধি করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া তুলে দেওয়া হয়েছে ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদহারে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। আশা করা যায়, খুব শিগগির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ক্রলিং পেগভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থানপতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দৈনিক কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রকাশ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগামী রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অভিপ্রায়ে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত যোগানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যতম পণ্য হিসেবে ভারত সরকারের কাছে এক লাখ টন চিনি এবং ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, পবিত্র রমজান মাসে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে সুলভ মূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পবিত্র রমজানে আমদানি করা ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর দ্রুত খালাসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়মিত পরিদর্শন করে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য মজুত এবং সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি আরও জানান, কোনো ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্বে জেলা-উপজেলায় গঠিত টাস্কফোর্স নিয়মিত সভা করে থাকে। উক্ত টাস্কফোর্স বাজারে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।