কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগা আগুনে হাজারো বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে কয়েক শ পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বরজের পাশাপাশি গমসহ অন্য অনেক ফসল পুড়ে গেছে। কিছু বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী রায়টা, নিশ্চিন্দ্রপাড়া, মাধবপুর, গোসাইপাড়া গ্রামের পানের বরজে আগুন লাগে। এ ঘটনায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে অন্য এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের আরও সাতটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দেয়।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, পানের বরজে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসে কাজ করছে। ওই এলাকায় পানি নেই। আমরা আমাদের সংগ্রেহে থাকা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট কাজ করে। পরে দুটি ইউনিট কাজ করেছে। বর্তমানে একটি ইউনিট কাজ করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি খলিল হোসেন বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে পান ছিল। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অপর পানচাষি তোফাজ্জল হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রায়টা পাথরঘাট এলাকা থেকে অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়। তারপর আড়কান্দী ও মাধবপুর গ্রামের মাঠের পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রতি বিঘায় কমপক্ষে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার দুই বিঘা পান ছিল। আমার প্রায় ছয় লাখ টাকার পান হতো। পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকার পান বরজ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন গোসাইপাড়া, রায়টা, মাধবপুর, নিশ্চিন্দ্রপুরপাড়াসহ আশপাশের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে কয়েক শ পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক হাজার পান বরজ আগুনে পুড়ে গেছে।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পানচাষি ও এলাকার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থনীতি নির্ভর করে পানচাষের ওপর। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। আগুনে যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে, আগুনের খবর জানতে পেরে কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন, ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।