নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে গত কয়েক বছর ধরে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পৃথক চারটি কোটেশনের মাধ্যমে ৪ কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে মোট খরচ হবে এক হাজার ৬৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলেরেট এনার্জি এলপি ১ কার্গো, সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর প্রাইভেট লিমিটেড এক কার্গো এবং সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া ২ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ এবং দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। এই টার্মিনাল দুটির মাধ্যমে জি-টু-জি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় কাতারগ্যাস থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বর্তমানে ২.৫ এমটিপিএল এবং ওমান থেকে ১০ বছর মেয়াদে বর্তমানে ১.০ এমটিপিএল মোট ৩.৫ এমটিপিএল এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া, দেশে বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১৩ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের লক্ষ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ ও অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২৩ টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চূড়ান্ত করে।
কোভিড-১৯ এর জন্য সরাসরি অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দরপ্রস্তাব গ্রহণ না করে এলএনজি স্পট পারচেজ (এলএসপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে দরপ্রস্তাব গ্রহণ করা হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে ২০২০ সাল থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির জন্য ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে মোট ৬৮টি দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। তার মধ্যে ৫৯টি কার্গো এলএনজি গ্রহণের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে স্পট মার্কেট থেকে ৫ কার্গো এলএনজি ক্রয় করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাস ধরে স্পট মার্কেটে এলএলজির দামের তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় গত ৪ মার্চ তারিখে আরপিজিসিএল থেকে এমএসপিএ স্বক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের জন্য ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের দর প্রস্তাব আহ্বান করে ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব দাখিল করায় এবং আবারও দর প্রস্তাব আহ্বানের পর্যাপ্ত সময় থাকায় এলএনজি আমদানির দাম আরও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জি এলপি প্রতি ইউনিট এলএনজি ৯.৭৮৫৮ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৪২৩ কোটি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫ টাকা।
এছাড়া একই পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স গানভর প্রাইভেট লিমিটেড এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি ইউনিটের দাম ৯.৩৬৯০ মার্কিন ডলার হিসেবে এতে ব্যয় হবে ৪০৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৮ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে প্রতি ইউনিট এলএনজি ৯.৪৭০০ মার্কিন ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ ৩১ হাজার ৪৪ টাকা। একই প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ভিটল এশিয়ার কাছ থেকে প্রতি ইউনিট এলএনজি ৯.২৩৮৮ মার্কিন ডলার হিসেবে আরও এক কার্গো এলএনজি ক্রয় করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬১ টাকা।