যশোর প্রতিনিধি : যশোরে পঞ্চাশ হাজার বিদ্যুৎগ্রাহক চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রি-পেমেন্ট মিটার রিচার্জ করতে তাদের প্রত্যেককে দৌঁড়াতে হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসে। তাদের মিটারে বসাতে হচ্ছে দুই শতাধিক ডিজিট। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অ্যাপ আপডেট করতে গ্রাহকদের এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ ও ২ দুটি সার্কেলের আওতায় যশোরে ১ লাখ ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১ এর আওতায় ৫৫ হাজার ও বিভাগ-২ এর আওতায় ৫৯ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের মধ্যে ৫০ হাজারকে স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রি-পেমেন্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। নতুন এই মিটার বসানোর পর থেকেই গ্রাহককে আগে মিটারে টাকা ভরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর টাকা শেষ হলেই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ। কিন্তু, এই মিটার নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। চলতি মাসে অভিযোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকেই প্রতিটি বাড়ির মালিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিদ্যুৎ অফিসে দৌঁড়াতে হচ্ছে। কারণ হচ্ছে, এ মাসে মিটারে অনলাইনে টাকা রিচার্জ করলেই দেওয়া হচ্ছে ২২০টি নম্বর যুক্ত টোকেন। যা সিস্টেম অনুযায়ী ইনপুট দিতে পারছেন না গ্রাহকরা। ফলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে বিদ্যুৎ অফিসে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে সিস্টেম বুঝে তাদেরকে সেই ২২০টি টোকেন নম্বর মিটারে ইনপুট দেওয়ার পর বিদ্যুৎ চালু হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করায় গোটা দেশেই প্রি পেমেন্ট বিদ্যুৎ গ্রাহকদের এ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কারণ হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে প্রি-পেমেন্ট মিটার পরিচালিত হয়ে থাকে। তাতে বিদ্যুতের আবাসিক ও বাণিজ্যিক মূল্য নির্ধারণ করা থাকে। আর সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিল কেটে নেয় মিটার। সম্প্রতি সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করায় অ্যাপটি আপডেট করা হয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ কারণে প্রতিটি মিটারে চলতি মাসে টাকা ভরলেই সয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার থেকে অতিরিক্ত টোকেন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ২২০টি নতুন ডিজিট মিটারে ইনপুট দেওয়ার পর গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট আপডেট হচ্ছে ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকের ভিড় লেগেই থাকছে। সেখান থেকে তারা নতুন ডিজিট ইনপুটের সিস্টেম জেনে বাড়ি গিয়ে একাধিকবার চেষ্টার পর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করতে হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
গ্রাহকরা বলছেন, আগে পোস্ট পেইড মিটারে এই দুর্ভোগ ছিল না। বড় সমস্যায় না পড়লে তাদেরকে বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হয়নি। অথচ এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় কথায় কথায় তাদের বিদ্যুৎ অফিসমুখি হতে হচ্ছে। মাসে অন্তত একবার বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়া তাদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যকরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ঘোপ জেল রোডের সাঈদ আহমেদ বলেন, গত ১০ মার্চ মিটারে টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে তাকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনলাইনে টাকা রিচার্জ হলেও ২২০টি টোকেন মিটারে ইনপুট দিতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। না পেরে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সিস্টেম বুঝে ধৈর্য্য সহকারে ফের তাকে ২২০টি নম্বর মিটারে বসাতে হয়েছে। যা অত্যন্ত বিড়ম্বনার। এর থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার বদরুল আলম বলেন, মাসের শুরু থেকেই এ কাজ নিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিনই অফিসে গ্রাহকের ভিড় থাকছে। এ নিয়ে তাদেরকে মানুষের নানা কথার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
যশোর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মাহমুদ বলেন, তাদের বিভাগের অধীনে ২৫ হাজার ৫০০ প্রি-পেমেন্ট মিটার গ্রাহক রয়েছেন। চলতি মাসে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব গ্রাহকদের তাদের অফিসে আসতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অ্যাপস জেনারেটের জন্য সব মিটারে নতুন কোড দেওয়া হয়েছে। এটা সিস্টেম অনুযায়ী ইনপুট করার পরই গ্রাহকের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তবে, একবার এ কষ্ট করা হলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।