আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। রোববার সিরিয়ার মরুভূমিতে এই বোমা ও বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল আরাবিয়া নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাকা প্রদেশের মরুভূমিতে ট্রাফল সংগ্রহ করার সময় এই হামলা চালানো হয়।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, উত্তর সিরিয়ার রাকা প্রদেশের মরুভূমিতে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১১ জন ট্রাফল সংগ্রহকারী নিহত হয়েছেন।
বিস্ফোরণের পর হামলাকারীরা গুলিও চালায়। পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি আরও জানায়, হামলার পর জঙ্গিরা তিনজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতেও ট্রাফল সংগ্রহের সময় আইএসের হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছিল।
সিরিয়ার মরুভূমি বিশ্বের সেরা মানের ট্রাফল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ট্রাফল হচ্ছে মৌসুমী খাবার। মরুভূমির ট্রাফল মূলত এক ধরনের ভোজ্য ছত্রাক যা শুষ্ক এলাকায় জন্মায় এবং এটি বেশ মূল্যবান একটি খাবার।
১৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য রাজস্ব নিয়ে আসে ট্রাফল। প্রতি কেজি ট্রাফল ৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়ে থাকে। যেখানে দেশটির মানুষের ন্যূনতম মাসিক মজুরি প্রায় ১৪ মার্কিন ডলার এবং দেশটির আনুমানিক ৯০ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
তবে ট্রাফল সংগ্রহে ঝুঁকি বেশি বলে প্রায়ই সতর্ক করে থাকে কর্তৃপক্ষ।
ট্রাফল সংগ্রহকারীরা সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় গ্রুপ হয়ে কাজ করে, আইএস জঙ্গিরা প্রায়ই তাদের ওপর হামলা চালায়। মরুভূমি থেকে তাদের অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় কিংবা হত্যা করা হয়।
তারপরও প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ট্রাফল সংগ্রহকারীরা উত্তর সিরিয়ার বিস্তীর্ণ মরুভূমি, যেটি আইএসের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ও ল্যান্ডমাইন দিয়ে ভরা থাকে, সেখান থেকে সুস্বাদু খাবারটি সংগ্রহ করতে তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকেন।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযানে ২০১৯ সালের মার্চে সিরিয়ায় নিজেদের সর্বশেষ ঘাঁটি হারায় আইএস। তবে জিহাদি গোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশ এখনো লুকিয়ে আছে সিরিয়ার মরুভূমিতে। সেখান থেকেই মারাত্মক আক্রমণ চালায় আইএস। তারা বেসামরিক নাগরিক, কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনী, সিরিয়ার সরকারি সৈন্য ও ইরানপন্থী যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য এ ধরনের আস্তানা ব্যবহার করে, পাশাপাশি প্রতিবেশি ইরাকেও হামলা চালিয়ে থাকে।
সিরিয়ায় এক দশক ধরে চলা যুদ্ধে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। এছাড়া লাখ লাখ মানুষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থীশিবিরে জীবনযাপন করছে।