কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের ভূমি অফিসের কর্মকর্তা এবং অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। সম্প্রতি অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরের ঘুষের টাকা গুণে নেয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে অফিস কক্ষে বসেই সেবা গ্রহীতার নিকট থেকে জমি খারিজ করিয়ে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুণে নিচ্ছেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী আব্দুল কাদির। বিষয়টি জনসম্মুখে উঠে আসায়, অতীতের ভুক্তভোগীরাও তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকারি নির্দিষ্ট ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা (ঘুষ) না দিলে কোনো কাজই করেন না ভূমি কর্মকর্তা মীর আবুল হাতিম ও অফিস সহকারী আব্দুল কাদির। দীর্ঘদিন ধরেই তারা এখানে ঘুষের রাজত্ব খুলে বসেছেন। অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়েও ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। তবে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
স্থানীয় ভোলা মিয়া বলেন, অনেকদিন ধরেই আমার জমি খারিজ করাতে ভূমি অফিসে আসা-যাওয়া করছি। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা না দিলে কোনভাবেই তারা কাজ করবেন না বলে আমাকে জানিয়ে দেন। পরে আমি অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরকে ৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু তিনি আমার কাছে আরও এক হাজার টাকা দাবি করেন।
টাকা দিয়েও দিনের পর দিন হয়রানির শিকার আরেক ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে জায়গা খারিজ করতে তিন হাজার টাকা লাগে; সেখানে দশ থেকে পনের হাজার টাকা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, টাকা নিয়েও কাজ করে দিতে হয়রানি করে। মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। এই অফিসের ভূমি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী দুজনে মিলে এখানকার মানুষদের অর্থ লুটপাট করছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে পল্লী বিদ্যুতের চাকরি ছেড়ে ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেন আব্দুল কাদির। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গ্রামে সুসজ্জিত একটি বাড়ি ছাড়াও, রাজধানীতে তার বাড়ি রয়েছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আব্দুল কাদির বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠানো হয়েছে। আমি এখন আর কিছু বলতে রাজি না।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মীর আবুল হাতিম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। তাছাড়া অফিস সহকারী আব্দুল কাদিরের বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সঠিক বলতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, আব্দুল কাদিরের ভিডিও আমিও দেখেছি। তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমি বিষয়টি জানিয়েছি। তার ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।