আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা থেকে এক হাজার মাইল পূর্বে ত্রাণ বোঝাই কাঠের বাক্সগুলো একটি মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমানে লোড করা হচ্ছে। বিমানের ভেতের তারা ৮০টি বাক্স ঠেলে দিয়েছে। প্রতিটি বড় বাক্সের সঙ্গে প্যারাসুট রয়েছে। ইসরায়েলের বাধার কারণে সড়ক পথে দিয়ে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না। তাই বিমান থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, জর্ডান, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় ত্রাণ ফেলছে।
ত্রাণ বিতরণের অন্যান্য উপায়ের তুলনায় এভাবে বিমা থেকে ত্রাণ ফেলা আরও ব্যয়বহুল, কম দক্ষ এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সমুদ্রে পড়ে যাওয়া ত্রাণবোঝাই বাক্স উদ্ধার চেষ্টার সময় ১২ ফিলিস্তিনি ডুবে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ত্রাণের বাক্সের কাছে পৌঁছতে গিয়ে পদদলিত হয়ে আরও ছয়জন নিহত হয়েছেন।
ককপিটের প্রবেশপথে একটি বড় আমেরিকান পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে মিশন কমান্ডার মেজ বুন বলেছিলেন, ‘আমরা সব খবর সম্পর্কে খুব সচেতন এবং আমরা হতাহতের সংখ্যা সীমিত করার চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, গাজা উপকূল বরাবর নিরাপদ, খোলা জায়গায় সাহায্য অবতরণ করার লক্ষ্যে সতর্কতার সাথে রুটটি ম্যাপ করা হয়েছে। তবে পার্সেলগুলো সমুদ্রের উপর ফেলে দেওয়ার কারণ হচ্ছে, যাতে ত্রুটিপূর্ণ প্যারাসুটসহ ত্রাণের বাক্সগুলো ভবন বা মানুষের উপর না হয়ে পানির ওপর পড়ে।
ত্রাণ নিতে গিয়ে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হামাস এগুলোকে ‘অকেজো’ এবং “ক্ষুধার্ত বেসামরিকদের জীবনের জন্য সত্যিকারের বিপদ’ বলে অভিহিত করে এই পদ্ধতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
তবে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা গাজার বাসিন্দারা এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। উত্তর গাজায় এটি মে মাসের মধ্যে ঘটতে পারে এবং জুলাইয়ের মধ্যে ছিটমহলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সম্ভবত গাজার উত্তরে দুর্ভিক্ষের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং ক্ষুধা সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর ঘটনা শিগগিরই ঘটতে পারে।
গাজার বাসিন্দা আহমেদ তাফেশ বলেন, ‘আমরা আজ সকালে দুবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বৃথা। আমরা যদি নিজেদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অন্তত একটি মটরশুটি বা হুমাস পেতে পারি, আমরা আশা করি আজ আমরা খাব। ক্ষুধা বেশির ভাগ মানুষকে গ্রাস করেছে, তাদের আর শক্তি নেই।’
বিবিসি জানিয়েছে, প্রাণের বিনিময়েও সামান্য একটু ত্রাণের জন্য তাই গাজার মানুষ এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।