বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুটের ঘটনার পর ঈদের দীর্ঘ ছুটি উপলক্ষে হোটেল-মোটেলের বুকিং বাতিল করছেন অনেক পর্যটক। এজন্য পর্যটন খাতে আবারও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে যারা বান্দরবানে ভ্রমণের এসেছেন, অধিকাংশ পর্যটক পার্শ্ববর্তী জেলার ও স্থানীয় পর্যটক বলে জানিয়েছেন টুরিস্ট পুলিশ।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) নীলাচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, নীলাচলে পর্যটকদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন বলে জানিয়েছেন নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আদিব বড়ুয়া।
তিনি জানান, অন্যান্য ঈদের ছুটিতে দৈনিক ৫-৬ হাজার পর্যটক ভ্রমণের আসেন। এ বছর রুমায় কেএনএফের তাণ্ডবের কারণে পর্যটক অনেক কম এসেছেন।
আবাসিক হোটেল হিলভিও ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম বলেন, সদরের আশপাশের পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল ও মেঘলায় পর্যটকদের কিছুটা ভিড় থাকলেও আবাসিক হোটেলগুলোতে তেমন পর্যটক নেই। ঈদের আগে প্রায় ৫০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পরে বুকিং হওয়া রুমগুলোও বাতিল করেছেন অনেকেই।
চট্টগ্রাম লোহাগাড়া থেকে নীলাচল ঘুরতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, বন্ধু-বান্ধব মিলে সকালে বান্দরবান এসেছেন। নীলাচলে ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে আবার চলে যাব।
হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে হোটেলের সবরকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। ঈদের আগে প্রায় হোটেলে অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। রুমা ও থানচির ঘটনার পরে অধিকাংশ বুকিং বাতিল করেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বছর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।
টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক স্বপন কুমার আইচ বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনে নীলাচলে কিছুটা দর্শনার্থী এসেছেন। নীলাচল ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের বেশিরভাগ আশপাশের এলাকার চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, কক্সবাজার ও স্থানীয় দর্শনার্থী কিছুটা এসেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে বান্দরবানে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি যৌথ অভিযান চলাকালে পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদরের আশপাশে নির্বিঘ্নে ভ্রমণে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, ওই সব এলাকার পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভ্রমণের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের যেতে পারবেন।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দিদারুল আলমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ অভিযান পরিচালনা সময় রুমা উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রে যে কোনো ধরনের পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সমন্বয় সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তে প্রয়োজনীয় এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপক অপহরণ, টাকা লুট ও পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক উদ্ধার হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ও টাকা উদ্ধার করা যায়নি। সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে।
সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।