1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কৌশলে মুনাফা ধরে রেখেছে

  • আপডেট সময় : রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০
  • ৩১৪ বার দেখা হয়েছে
multinational

মহামারী করোনা ভাইরাসের ধাক্কায় দেশের স্থানীয় শিল্পের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। করোনা সংক্রমণরোধে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দীর্ঘদিনের লকডাউনে অধিকাংশ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি পণ্য বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মুনাফায় থাকতে বিলম্বিত কর থেকে আয় নিয়ে আসার পাশাপাশি পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দেখানোসহ নানা কৌশল ব্যবহার করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এর ফলে বিক্রি কমে গেলেও কোনো কোনো কোম্পানি মুনাফা ধরে রাখতে পেরেছে। তবে বেশিরভাগ কোম্পানিরই মুনাফা কমেছে। লোকসানেও পড়েছে দুই কোম্পানি। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমনটি দেখা গেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করোনায় দীর্ঘদিন উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ থাকায় দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগের আয় কমেছে ৮ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিমেন্ট ও ক্লিংকার বিক্রি থেকে আয় কমেছে ৪১ শতাংশ। কিন্তু বিলম্বিত কর থেকে আয় সমন্বয়ের কারণে কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত মুনাফা ধরে রাখতে পেরেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে লাফার্জহোলসিমের পরিচালন মুনাফা হয় ২৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৬৩ শতাংশ কম।

করোনার কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয়কর বাবদ ব্যয়ের পরিবর্তে বিলম্বিত কর সুবিধা পেয়েছে লাফার্জহোলসিম। যেখানে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয়কর বাবদ ব্যয় ছিল ২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা, সেখানে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে উল্টো বিলম্বিত কর সমন্বয় থেকে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এরফলে করোনার মধ্যে বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার পরও বিলম্বিত কর সুবিধার কারণে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি নিট মুনাফা হয়েছে ৩২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজেশ সুরানা বলেন, কভিড-১৯ স্বাস্থ্য খাতে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলেছে। এ সময়ে কোম্পানি স্বাস্থ্য, ব্যয় ও অর্থায়নে মনোযোগ দিয়েছে। লাফার্জহোলসিম হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি, যারা কর্মী ও অংশীদারদের সুরক্ষায় অফিসের বাইরে বিশেষ করে বাসায় বসে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমাদের বিনিয়োগের কারণে লকডাউনের সময়ে অনলাইনে ক্রয়াদেশ সম্পন্ন করা গেছে। ব্যয় হ্রাস ও দক্ষতা উন্নয়নের কারণে আমরা বেশ কয়েকটি উদ্যোগে দ্রুত কাজ করতেও সফল হয়েছি।

এদিকে করোনা সংকটে বিক্রি থেকে আয় ৩৯ শতাংশ কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছে অপর বহুজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি হাইডেলবার্গসিমেন্ট বাংলাদেশ। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা। বিক্রি কমে যাওয়ায় কোম্পানিটি ৮ কোটি টাকা পরিচালন লোকসানে পড়েছে। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর পরিশোধের পর হাইডেলবার্গসিমেন্টের নিট লোকসান দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কিছুটা মুনাফা থাকায় প্রথমার্ধে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। চলতি প্রথমার্ধে এ কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা নিট মুনাফা ছিল।

দেশের সিগারেটের বাজারের ৭০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ থাকা বহুজাতিক কোম্পানি বিএটি বাংলাদেশ করোনা সংকটে চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিগারেটের শলাকা বিক্রি ১২ শতাংশ কমেছে। তবে বিক্রি থেকে আয় কমলেও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক হারে উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দেখানোয় করোনার মধ্যেও মুনাফায় উল্লম্ফন হয়েছে। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানির বিক্রীত পণ্যের বিপরীতে উৎপাদন ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কমিয়ে দেখানো হয়েছে। আর পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দেখিয়েছে ৮৪ শতাংশ, যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বড় ব্যয়ের খাত কমে যাওয়ায় চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৯৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯৪ শতাংশ বেশি।

চলতি এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৮ শতাংশের বেশি রেভিনিউ কমেছে পুঁজিবাজারের শীর্ষ বাজার মূলধনী কোম্পানি গ্রামীণফোনের। এ সময়ে রেভিনিউ কমলেও পরিচালন ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের পরিচালন মুনাফা হয় ১ হাজার ৪০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ কম। কর পরিশোধের পর চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

করোনায় টানা ৬৬ দিন বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ৪২ শতাংশের বেশি বিক্রি থেকে আয় হারিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড। চলতি এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে সিঙ্গারের বিক্রি নেমে এসেছে ২৯৭ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫১৭ কোটি টাকা। উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি কমে যাওয়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা কমে গেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। এ সময়ে সিঙ্গারের সুদবাবদ ব্যয়ও বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিঙ্গারের করপরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। করোনায় এ কোম্পানির নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

সিরামিক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড লোকসানে পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফায় থাকলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি থেকে আয় কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু করোনার কারণে দেশব্যাপী লকডাউনে উৎপাদন ও ডিলার আউটলেট বন্ধ থাকার পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথমার্ধে বিক্রি কমে দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৯২ কোটি টাকা। এ কারণে প্রথমার্ধে নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৩৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা ছিল।

এদিকে করোনায় বেশিরভাগ কোম্পানির আয় কমলেও ম্যারিকো বাংলাদেশের নিট মুনাফা উল্টো বেড়েছে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ কোম্পানির নিট মুনাফা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ