রাজশাহী প্রতিনিধি : বৈশাখের সূর্য যেন আগুন ঝরাছে রাজশাহী অঞ্চলে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঠা ঠা রোদে তেঁতে উঠেছে পথঘাট। আর দুপুর গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ওপরে। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীজুড়ে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। প্রখর রোদ-গরমে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে মাইকিং করে সতর্কও করা হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বুধবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ আজজ শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ৩টায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গিয়ে ঠেকে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১ এপ্রিলের পর রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর উঠলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী রাজশাহীতে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আগামী কয়েক দিন এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
তীব্র খরার কবলে পড়ে নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। নিদারুণ কষ্টে একেকটি দিন-রাত পার করছেন এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও গরমে হাঁসফাঁস করছে। অচল হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গেছে। দুর্বিষহ গরমে খা খা করছে মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক। বাড়ছে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই।
গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে অধিকাংশ মসজিদেই চলমান তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গেল দুই দিন থেকে রাজশাহীতে তাপপ্রবাহ নিয়ে সতর্ক থাকতে মাইকিং করেছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তারা এই গরমে হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সামান্য বিরতি দিয়ে থার্মোমিটারে তাপমাত্রার পারদ এবার ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল দীর্ঘ ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এর আগে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে ‘বজ্রমেঘ’ তৈরি হলে কেবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা দেখা দেবে। আর যদি এটা স্থানীয়ভাবে তৈরি না হয় তাহলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় না। এখন বৃষ্টি না হলে তাপমাত্রা আপাতত তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই ওঠানামা করবে।