জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : চলতি মাসে (জুন) ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে।
পাশাপাশি এ মাসে দেশে ৪ থেকে ৬ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রোববার (২ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে।
এদিন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথমার্ধে সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করতে পারে এবং এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এ মাসে দেশে এক থেকে দুটি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
মে মাসে ছিল তিনটি তাপপ্রবাহ
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ১ থেকে ৫ মে পর্যন্ত মাঝারি থেকে তীব্র, ১৩ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত মৃদু এবং ২৮ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
স্বাভাবিকের চেয়ে ৯.৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে গত মাসে
মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিকের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। বরিশালে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিক অপেক্ষা সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এই বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ২২ মে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ২৩ মে সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ২৪ মে সকাল ৯টায় পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ২৫ মে রাত দেড়টায় একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়।
গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ২৫ মে রাত ৮টায় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়। পরে এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ২৬ মে সকাল ৬টায় একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ২৭ মে রাত ৩টায় মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ২৭ মে সকাল ১০টায় উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়, যা পরে আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ বৃষ্টিপাত ঝড়িয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে।
ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম করার সময় পটুয়াখালী ও খেপুপাড়ায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১১ কি.মি. এবং দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩০০ মি.মি. রেকর্ড করা হয়।
এদিকে, মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় দেশের অনেক স্থানের ওপর দিয়ে ১-৫ মে পর্যন্ত মাঝারি থেকে তীব্র, ১৩-২৬ মে পর্যন্ত মৃদু এবং ২৮-৩০ মে পর্যন্ত থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (যশোর ও চুয়াডাঙ্গা ০১ মে) রেকর্ড করা হয়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।