জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ জুন হাজির হতে নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (৯ জুন) দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, রোববার বেনজীরের স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হলেও তারা দুর্নীতি দমন কমিশনে আসেননি। গত ২৮ মে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের ৯ জুন হাজির হতে নোটিশ দেয় কমিশন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হননি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। ওইদিন বেনজীর আহমেদ না আসায় আগামী ২৩ জুন হাজির হতে সাবেক আইজিপিকে আবারও নোটিশ দেয় দুদক।
গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
বেনজীরের আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
গত ২১ এপ্রিল বেনজীরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও সন্তানদের নামে শেয়ার বাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জানা যায়, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বেনজীর আহমেদের, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জার, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব রয়েছে।
এ ছাড়া, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন আদালত। ২৩ ও ২৬ মে আদালত থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের অর্থ যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয়, সেজন্য আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে।
গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদিকে, ২৬ মে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ পরিবার নিয়ে গোপনে বিদেশ চলে গেছেন বলে খবর চাউর হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি।