পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদার মারা গেছেন ১৯৬৯ সালে। তার নামে ২০১৪ সালে ৪০ হাজার টাকার কৃষিঋণ তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কেশবপুর শাখা থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য তার বাড়িতে নোটিস এসেছে। নোটিস পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন জয়নালের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবুল বাশার।
শুধু জয়নালই নয়, এভাবে স্বাধীনতার আগে মারা যাওয়া চার জনসহ কোনো দিন এই ব্যাংকের শাখাটিতে না যাওয়া ১৪ জনকে দেওয়া হয়েছে ঋণ পরিশোধের নোটিস। নোটিস পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জনের বাড়ি উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে।
নোটিস পাওয়ার পর ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনেরা কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায় যোগাযোগ করেছেন। তারা ব্যাপারটি দ্রুত সুরাহা করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, ব্যাংকটির শাখা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ২০১৪ সালে কর্মরত মাঠ কর্মকর্তাকে তলব করার কথা জানিয়েছেন। যদিও ওই কর্মকর্তা এখন অবসরে চলে গেছেন। তৎকালীন ব্যবস্থাপকও দেশের বাইরে চলে গেছেন। বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা। ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার কার্যক্রম শুরু হয়।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবুল বাশার। তার বাবা জয়নাল ১৯৬৯ সালে মারা যান। ২০২৪ সালে জয়নালের নামে ২০১৪ সালে ঋণ তোলা হয়েছে
কালিকাপুর গ্রামের বাবুল মৃধা জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন। কোনো দিন তিনি কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেননি। অথচ তার নামে কেশবপুর শাখা থেকে ২০১৪ সালে ১৭ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন মৃধার নামে ৭৫ ও ১৭ হাজার টাকার দুটি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। আবদুল করিম মৃধা নামের এক ব্যক্তির নামে ৩৫ হাজার টাকার ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। গ্রাম কালিকাপুর উল্লেখ করা হলেও তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে রুস্তম আলী মৃধা। অথচ এ নামের কেউ কালিকাপুর গ্রামে নেই।
অপর ভুক্তভোগী মো. মনির হোসেন জানান, তিনি কোনো দিন ওই ব্যাংকে যাননি। অথচ তার নামে ২০১৪ সালে ঋণ উত্তোলন হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে চিঠি পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। কয়েক দফা ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখানে গিয়ে দেখেন ঠিকানা ঠিক থাকলেও ছবি ও স্বাক্ষর তার না।
কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ আলম জানান, তিনি চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর শাখায় যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী কয়েকজন কার্যালয়ে এসে তাকে বিষয়টি জানান। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঋণগুলো ২০১৪ সালে অনুমোদন করা হয়েছে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। সেই সময় যিনি ব্যবস্থাপক ছিলেন, তিনি সম্ভবত দেশের বাইরে চলে গেছেন।
২০১৪ সালে কেশবপুর শাখার মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন মো. শফিউর রহমান। পাঁচ বছর আগে তিনি অবসরে চলে গেছেন। তার দাবি, তিনি কোনো মৃত ব্যক্তি কিংবা নামে-বেনামে কারও ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের পটুয়াখালীর মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আশফাকুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’