আর্থিক খাতের সঙ্কট মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিরা। পাশাপাশি সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে খাতগুলোর জন্য। এসব সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) বৈঠকে এসব দাবি উঠে আসে।
বৈঠকে জানানো হয়, দেশের আর্থিক খাতের সঙ্কট করোনা পরিস্থিতিতে বেড়েছে বহুগুনে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে বেশ কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারে সম্ভাব্য পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের এ বিষয়ে লিখিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে আর্থিক খাতের সঙ্কট আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় পি কে হালদার ও উত্তরা ফাইন্যান্স কেলেঙ্কারিতে আমানত ফিরে না পাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন গ্রাহকরা। এখন আমানত উঠিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ দিচ্ছেন তারা।
দেশে বর্তমানে ৩৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার মধ্যে ১১টির অবস্থা খুবই নাজুক। এর অন্যতম পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস। আর্থিক অনিয়মের কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইতোমধ্যে মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও আমানতকারীদের অর্থ যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না। এতে অনেকটাই আমানত ফিরে না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা তারল্য সঙ্কটে আছেন তাদের জন্য এই তহবিল গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। তহবিল গঠন হলে, যারা তারল্য সঙ্কটের কারণে ভালো করতে পারছেন না, তারা সুবিধা নিয়ে সচেতনভাবে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। মিনিমাম সার্ভিস চার্জ বা ব্যাংক রেটে এ তহবিল চান তারা।
তবে এ ধরনের তহবিল সরাসরি করতে পারবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে তহবিল গঠনে গত বছরেই সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া, তারল্য সঙ্কটের কারণে যেসব দুর্বল প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করতে পারছে না, তাদের জন্য প্রি-ফাইন্যান্স স্কিম গঠনের দাবি জানানো হয়।
এ বিষয়ে বিএলএফসিএর ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘আর্থিক খাতের বর্তমান সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে উত্তরণ করে কীভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গুড গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ঋণ প্রদান ও আদায়ের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া প্রস্তাবিত ফাইন্যন্স কোম্পানি অ্যাক্ট দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সুপারিশ করেছে বিএলএফসিএ।’
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে এ সময়ে নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হওয়ার কথা নয়, কিন্তু এরপরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে এই খাতে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসেই বেড়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের কারণে এই খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।’