জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার (২৬ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করেন তিনি।
এরপরে তিনি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং পরিদর্শন বইয়ে সই করেন।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হেলিকপ্টারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান মোদি। স্মৃতিসৌধের কর্মসূচি শেষে আবার হেলিকপ্টারে ঢাকায় রওনা দেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর গমন উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন এলাকায় নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এর মধ্যে সব ধরনের যানের পাশাপাশি জনসাধারণের চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে মোদির নেতৃ্ত্বে আসা ৭১ থেকে ৭২ সদস্যের ভারতের প্রতিনিধি দলটি বহনকারী বিশেষ বিমান ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
১০টা ৫৮ মিনিটে বিমান থেকে নামেন সাদা পাঞ্জাবির ওপর কালো স্ট্রাইপের মুজিব কোর্ট পরা মোদি। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
এ সময় বিমানবন্দরে মন্ত্রিসভার সদস্যরাসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১১টা ৯ মিনিটে বিমানবন্দর ছাড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ ১০ দিনের অনুষ্ঠানে এর আগে বিদেশি নেতারা অংশ নিয়েছেন। শেষ দিন (২৬ মার্চ) অংশ নিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দুই উদযাপনে অংশ নিতে আসলেও মোদির এই সফরে স্থান পাবে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দেশ, প্রতিবেশী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সুগভীর। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির সরকার প্রধানের সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার কঠোরতাসহ আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখেনি বাংলাদেশ।
শুক্রবার এরপর ধানমন্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন মোদি। বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মোদি।
শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে নরেন্দ্র মোদি সাতক্ষীরার সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঈশ্বরীপুর যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজা দিতে যাবেন। যশোরেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেয়ার পর সকাল ১০টার দিকে তিনি মন্দির ত্যাগ করবেন। এরপর তিনি হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও কাশিয়ানী উপজেলার মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ সফরে তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে অনেকগুলো চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা অন্যতম। এছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসবে বলেও জানা গেছে। শনিবার রাতে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি।