বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় এক বছর আগে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই এ প্রকল্পের। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ধরনের ও যত পরিমাণ বর্জ্য দরকার তা সরবরাহ নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সংস্থাটি।
তবে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, এই চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নে আইন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠি। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। তারপর প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরু হবে মাঠ পর্যায়ে কাজ।
সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে চুক্তি করে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ডিএনসিসি। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সিএমইসি। প্রকল্প হবে ২৫ বছর মেয়াদি। বিদুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। নিজ ঝুঁকিতে প্ল্যান্ট স্থাপন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে চীনা কোম্পানি। পরে চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করবে বিউবোর কাছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ডিএনসিসি ৩০ একর জমি এবং দিনে তিন হাজার টন জ্বালানি বর্জ্য সরবরাহ করবে। প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করতে না পারলে ডিএনসিসি প্রতি টন ঘাটতি বর্জ্যের জন্য তিন হাজার টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।
ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নেওয়ার অন্যতম কারণ ঢাকার আমিনবাজারে ল্যান্ডফিল্ডের ওপর চাপ কমানো। তবে প্রকল্পটি অত্যন্ত জটিল। কারণ, ডিএনসিসিতে বর্জ্যের দাহ্য হওয়ার ক্ষমতা বা ক্যালরিফিক ভ্যালু খুবই কম। এখন চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। এই পরিমাণ বর্জ্য দিতে না পারলে প্রতি টনের জন্য জরিমানা দিতে হবে তিন হাজার টাকা। অথচ ডিএনসিসির ৫৪ ওয়ার্ডে সব মিলে বর্জ্য আসে দুই হাজার ৭শ টন। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বর্জ্য সরবরাহ করা।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এই প্রকল্প পরিচালনায় বর্জ্যের ঘাটতি হবে না। এখন ডিএনসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া সাভার পৌরসভার বর্জ্য এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র। তবে কিছুটা জটিলতা আছে, সেটা হলো সঠিক বা জ্বালানি উপযোগী বর্জ্য সরবরাহ করা। কারণ, এ বর্জ্য পুড়িয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
‘গত এক বছরে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্জ্য সরবরাহ, ধরন ও প্রয়োজনীয় বর্জ্য দিতে না পারলে জরিমানা নিয়ে একাধিক সভা হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে মেডিকেল বর্জ্য, মৃত প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) ছাড়া সব ধরনের বর্জ্য তাদের দেওয়া হবে। এই বর্জ্য তারা নিজ ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি উপযোগী করবে।’
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, ডিএনসিসি এলাকার গৃহস্থালি, হোটেল-মোটেল, কলকারখানা, হাটবাজার, সড়কে পড়ে থাকা বর্জ্য প্রতিদিন সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। এই ল্যান্ডফিলের আয়তন প্রায় ৫০ একর। এখন এই ৫০ একর জমির পাশেই আরও ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করবে ডিএনসিসি। যদিও এই প্রকল্পের জন্য প্রথমে ১০০ একর জমি চেয়েছিল চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। কিন্তু ওই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের সক্ষমতা ডিএনসিসির নেই। তাই তারা ৩০ একর জমিতে প্ল্যান্ট স্থাপনের চুক্তি করে।
জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে ওই পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে ৬শ কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু এই খাতে ডিএনসিসির কাছে আছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। এখন বাকি টাকা ছাড়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কারণ, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা রয়েছে। এখন একসঙ্গে পুরো টাকা দিলে দ্রুতগতিতে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করবে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
বর্জ্যের বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ বিভাগ
চুক্তি অনুযায়ী ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে করবে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএমইসি)। এতে ১৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সিএমইসি। তাদের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৮ দশমিক ২৯৫ টাকা।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ডিএনসিসি জমি অধিগ্রহণ করলেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্প সফল হলে দেশের অন্য সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলে একই প্রকল্প নেওয়া হবে।