দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০২১ সালের ব্যবসায় আগের বছরের থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ২৯৭ কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা হয়েছে। তবে এরমধ্য থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ১ টাকাও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য ব্যাংকটিকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার অতিরিক্ত করের শাস্তির কবলে পড়তে হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে নগদ লভ্যাংশের বেশি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। অর্থাৎ নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সর্বোচ্চ সমান সমান হতে পারবে। যদি কোনো কোম্পানি বোনাস শেয়ার বেশি দেয়, তাহলে ওই বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এছাড়া মুনাফার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। অন্যথায় রিটেইন আর্নিংস বা রিজার্ভে প্রেরণ করা পুরো অর্থের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২০২১ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ৩.৬৬ টাকা হিসেবে মোট ২৯৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারবাবদ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে মোট ৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা মুনাফার ২৭% দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে। বাকি ২১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৭৩% রিজার্ভে যোগ হবে। এর মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফার ১ টাকাও শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে না।
এরফলে কোম্পানিটিকে ৭০% এর বেশি রিজার্ভের রাখার কারনে ২১৬ কোটি ১২ লাখ টাকার উপরে ১০% হারে ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে। এছাড়া শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণার কারনে ৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে। ফলে মোট ২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সচিব মালিক মুন্তাসির রেজা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আসলে আমাদের ব্যবসা বাড়ছে এবং মূলধন বাড়ানোর নির্দেশনা আছে। এ কারনে বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সরকার যেহেতু শুধু বোনাসের উপর অতিরিক্ত কর দেওয়ার আইন করেছে, তাই দিতে হবে। কিছুতো করার নাই।
এদিকে ব্যাংকটির ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) ব্যবসায় বড় উত্থান হয়েছে। কোম্পানিটির ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ১.২০ টাকা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩.৬৬ টাকায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে মুনাফা হয়েছে ২.৪৬ টাকা বা পুরো বছরের ৬৭%।
এর আগে ২০২০ সালের ব্যবসায়ও শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দিয়ে অতিরিক্ত আয়করের শাস্তির কবলে পড়েছিল ব্যাংকটি। ওই বছর শেয়ারপ্রতি ১.৩১ টাকা হিসেবে মোট ৯৭ কোটি ৪ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছিল। তবে এরমধ্যে থেকে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারবাবদ শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে মোট ৭৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয়। বাকি ২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা রিজার্ভে যোগ হয়।
এরফলে কোম্পানিটিকে ৭৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে ৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
এদিকে ব্যাংকটির শেষ প্রান্তিকের সঙ্গে সঙ্গে আগের বছরের তুলনায় মুনাফায় বড় উত্থান হয়েছে। আগের বছরের ১.৩১ টাকার ইপিএস ২০২১ সালে ৩.৬৬ টাকায় উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে ইপিএস বেড়েছে ২.৩৫ টাকা বা ১৭৯ শতাংশ।
উল্লেখ্য সোমবার (২৫ এপ্রিল) লেনদেন শেষে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১৮.৩০ টাকায়।