শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন, ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা, কেরোসিনে ৩৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা, পেট্রলে ৪৪ টাকা বেড়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে লঞ্চভাড়া বাড়ানো নিয়ে সংকটে মালিকরা।
তারা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর এমনিতেই লঞ্চের যাত্রী কমে গেছে। এখন আবার ভাড়া বাড়ালে এ সেক্টরে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে জ্বালানি তেলের দাম এত বেড়েছে যে, ভাড়া না বাড়িয়েও উপায় নেই। মালিকদের দাবি, এখন লোকসান গুনে লঞ্চ চালাতে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে লঞ্চমালিকরা এখনো কোনো প্রস্তাব দেননি। তারা প্রস্তাব দিলে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লঞ্চমালিকরা জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যেই সরকারের কাছে লঞ্চভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। আগামী ১১ আগস্ট ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আগে ভোক্তাপর্যায়ে খুচরামূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা। তবে দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল।
শনিবার (৬ আগস্ট) ‘জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়: পরিবহন সেক্টরে তার প্রভাব’ নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ধারণা দিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২৯ পয়সা ও লঞ্চভাড়া ৪২ পয়সা বাড়তে পারে।
তবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দূরপাল্লায় বাসভাড়া বেড়েছে ৪০ পয়সা। ভাড়া বাড়ানোর পর মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাসে ২ টাকা ৫০ পয়সা, মিনিবাসে ২ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়া দিতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা।
লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আপনি এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলুন। তারা আপনাকে সহযোগিতা করতে পারবেন।’
রোববার সকালে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মালিকরা এখনো ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব দেয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামী ১১ আগস্ট ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মিটিং আছে। আমরা আজকের (রোববার) মধ্যে আমাদের প্রস্তাব বিআইডব্লিউটিএ-তে পাঠিয়ে দেবো।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো এমনিতেই আমাদের দুরাবস্থা। পদ্মা সেতু হওয়ার পর আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। পদ্মা সেতু আমাদের পঙ্গু করে দিয়েছে। এখন ৮০ শতাংশ কেবিন খালি রেখেই লঞ্চ চলাচল করছে। আর ডেকের যাত্রী ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এখন যদি আবার ভাড়া বাড়ে, তখন কী হবে? চিন্তা করছি- আমরা কী করবো?’
এ প্রেক্ষাপটে লঞ্চ কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন বলেও জানান শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ার পর এখন লঞ্চ পরিচালনা করা পুরোটাই লস। বরিশাল যেতে প্রতিটি ট্রিপে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেড়ে গেছে। এমনিতেই পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চে যাত্রী সংকট। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আমাদের সমস্যা আরও বেড়ে গেলো।’
গত বছরের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ভোক্তাপর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। ৮ নভেম্বর থেকে বাড়ানো হয় লঞ্চভাড়া। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি লঞ্চভাড়া ৬০ পয়সা বাড়ে, যা শতাংশের হিসাবে কম দূরত্বের লঞ্চের ক্ষেত্রে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ ও বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়।
তখন প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ৬০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা ৩০ পয়সা এবং প্রথম ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ৬০ পয়সা বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ২৫ টাকা।