সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো বেতন-ভাতা বাবদ নীট প্রিমিয়ামের ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করতে পারবে না। এমন নির্দেশনা দিয়ে গত মঙ্গলবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইন্স্যুরেন্স ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ)। কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সধারী এজেন্টকে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর কর্তন করে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কমিশন পরিশোধ নিশ্চিত করার স্বার্থে এমন নির্দেশনা জারি করেছে আইডিআরএ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী পহেলা মার্চ থেকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসা আহরণের জন্য সব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে কমিশনের ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে পদায়ন করতে হবে। এছাড়া বীমা আইন ২০১০ এর ৫৮ (১) ধারা অনুযায়ী সাধারণ বীমা কোম্পানির এজেন্ট ছাড়া অন্য কারো কমিশন বা অন্য কোন নামে পারিশ্রমিক পরিশোধ না করার যে আইন রয়েছে তা যথাযথভাবে পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি অবৈধ কমিশন বন্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু এরপরও কোম্পানিগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে তা থেকে অবৈধভাবে কমিশন দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মূলত এ কারণেই বেতন-ভাতা খাতে ব্যয়ের সীমা বেধে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিআরএ।
এর আগে গত বছর সাধারণ বীমা খাতে অবৈধ কমিশন বন্ধের লক্ষ্যে প্রিমিয়াম জমাকরণে তিনটির অতিরিক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আইডিআরএ।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মূলধন সংরক্ষণের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য আয় জমাকরণের জন্য অপর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। এছাড়া দাবি পরিশোধের জন্য একটি ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম জমাকরণ হিসাব থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ওই হিসাব দু’টিতে ট্রান্সফার করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বীমা দাবি, কমিশন ও বেতন-ভাতাদির টাকা নগদে পরিশোধ করা যাবে না। এছাড়া শাখা কার্যালয়ের খরচ নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রতিটি শাখায় একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রিমিয়াম হিসাব থেকে ক্রসড চেক বা ফান্ড ট্রান্সফার ছাড়া অন্য কোনো অর্থ ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে না। শাখা কার্যালয়ের অন্য যে কোনো আয়, কমিশন ফেরত ইত্যাদি ব্যাংক হিসাবে জমাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আইডিআরএ বলছে, বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত কমিশন দেয়ার প্রবণতা বাড়ছেই। ১০০ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই কমিশন প্রদান করে কোনো কোনো কোম্পানি। তবে এর কোনো হিসাব নেই। এদিকে আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয় আইন মেনেই কমিশন দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে দেয়া এই কমিশনের হিসাব মেলাতে কোম্পানিগুলো তাদের সংগ্রহ করা প্রিমিয়াম প্রদর্শন করে না। কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ পলিসি করে, কাগজপত্রে তার অর্ধেকেরও কম দেখানো হয়। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পলিসির তথ্য গোপন রেখে তৈরি করা হয় আর্থিক প্রতিবেদন। এক্ষেত্রে কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাবের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয় অতিরিক্ত কমিশনসহ কোম্পানির নানা ধরনের অবৈধ ব্যয়ের অর্থ। বীমা খাতে এ অবৈধ কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর আয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।