শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ সমাপ্ত অর্থবছরে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মুনাফা দেখিয়েছে।
কোম্পানি সূত্র বলছে, উচ্চ ডলার রেটের কারণে দেশের উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে বিদেশি ঋণের পরিষেবা ব্যয় আকাশচুম্বী হওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ধাক্কা লেগেছে।
সূত্রমতে, উন্নয়নকাজে কোম্পানি বিভিন্ন সময় উন্নয়ন সহযোগীর ঋণ নিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার অনুসারে, আগের বছর এই ঋণের পরিমাণ যা ছিল, এবার তা অনেক বেশি। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠা-নামাজনিত কারণে বড় লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির।
সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হারের কারণে কোম্পানির লোকসান ৯৬৭ শতাংশ বেড়ে ৫৩৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় হয়েছে।
এর ফলে পরিচালন মুনাফায় ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানির নিট মুনাফা ৬১.৬৮ শতাংশ কমে ১২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা হয়েছে। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর থেকে সর্বনিম্ন।
২০২১-২২ অর্থবছরে মুনাফা কমার মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে কোম্পানিটির মুনাফায় যে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল, সেখানে ছেদ পড়লো।
২০২১ সালের জুলাই মাসে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮২ পয়সা। এরপর চলতি বছরের মে মাসে তা বাড়তে শুরু করে এবং একই মাসে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
সরকার দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে পিজিসিবিকে অর্থায়ন করে আসছে।
সরকার কোম্পানিকে যে অর্থ প্রদান করে তা ৬০ শতাংশ ইক্যুইটি এবং ৪০ শতাংশ ঋণ হিসেবে প্রদান করে। কোম্পানিটির ৭৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের।
কোম্পানিটির নীট মুনাফা কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শেয়ারহোল্ডাররা। কারণ আগের বছরের তুলনায় এবার ১০ শতাংশ কম ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েছে পাওয়ারগ্রীড।
আগের বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ভালো মুনাফা করায় ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করেছে কোম্পানিটি।
দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে মিল রেখে নতুন নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্র তথা সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ করছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির আয়ের উৎস ট্রান্সমিশন চার্জ। বিগত বছরের ধারবাহিকতায় নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে আয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির আয় ৬.৮৮% বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, রাজস্ব বাড়লেও আর্থিক ব্যয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার ওঠানামার কারণে এর মুনাফা ব্যাপকভাবে কমেছে।
কোম্পানির আর্থিক ব্যয় ১২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা হয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিটিকে ১৯৯৬ সালে একটি সম্পূর্ণ বিপিডিবি মালিকানাধীন সহায়ক কোম্পানি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির রাজস্ব ৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মুনাফা কমেছে ২০ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে রাজস্ব বেড়েছে ৬৯১ কোটি টাকা, যেখানে মুনাফা কমেছে ১০৪ কোটি টাকায় যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১৩০ কোটি টাকা।