দেশের শেয়ারবাজার সূচকের বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে। এতে চার সপ্তাহ ধরে উত্থান হয়েছে শেয়ারবাজারে। আলোচ্য সপ্তাহটিতে সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে ১১ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত ছিল। সপ্তাহজুড়ে প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের মৌসুমে খাতভিত্তিক শেয়ারে মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীদের কেনার চাপে বাজারে উত্থান হয়েছে বলে জানিয়েছে বাজার-সংশ্লিষ্টরা। এতে এ সপ্তাহে সূচক আট মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। এছাড়া বাজারে কিছু অস্থিরতাও দেখা গেছে, যা বিনিয়োগ তুলে কিছু নির্দিষ্ট খাতের শেয়ারে নতুন করে বিনিয়োগের ফলে হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে সপ্তাহজুড়ে শেয়ার কেনা ও বেচা উভয় দিক থেকেই চাপ ছিল বলে জানান তারা।
আলোচ্য সপ্তাহে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে সবচেয়ে বেশি কেনার চাপ থাকায় সপ্তাহটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে আলোচ্য খাতের শেয়ার। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ থাকায় জীবন বিমা খাতের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকার। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৪৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৮৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১১৮টির, দর কমেছে ২৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯৭টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ৯টি কোম্পানির শেয়ার।
গত সপ্তাহে প্রধান সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইএক্স ২৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৬৫ দশমিক ৬১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৯৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৮৩ দশমিক ১৮ পয়েন্টে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুবিধাবাদী বিনিয়োগকারীরা সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া ত্রৈমাসিকের আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে খাতভিত্তিক লাভজনক শেয়ারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য অস্থিরতার মধ্যেও ডিএসইর প্রধান সূচক টানা চার সপ্তাহ ধরে তার ঊর্ধ্বমুখীর ধারা অব্যাহত রেখেছে। বাজার এই সপ্তাহে ইতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক আট মাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। এছাড়া সপ্তাহটিতে কিছু মৌলিক শেয়ারদরের ফ্লোর ভেঙে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। প্রথম কার্যদিবস থেকে পরের দুই কার্যদিবস পর্যন্ত মুনাফা সংগ্রহের কারণে সূচক নি¤œমুখী হলেও, পরের কার্যদিবসে আবার সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহটিতে সাধারণ বিমার শেয়ারগুলো দর বৃদ্ধির শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে, যা বাজারকে ঊর্ধ্বমুখীর অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।
গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাট খাতে দর বেড়েছে ৭ শতাংশ। ১ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল আইটি খাতের শেয়ার। চাপ সবচেয়ে বেশি থাকা জীবন বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিরামিক খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা সেবা ও আবাসন খাতের শেয়ারদর কমেছে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। এরপর সাধারণ বিমা খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ১০ দশমিক ১০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল প্রকৌশল খাত।
এদিকে গেল সপ্তাহ শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৩১ পয়েন্টে।