নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাসহ সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে ২৬১টি নতুন জিপ কেনার উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনে সে প্রস্তাব আটকে আছে। জিপগুলো কিনতে কত টাকা ব্যয় হবে তা তাকে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি বিষয় পরিস্কার করতে বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ব্যবহারের জন্য জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৬১টি জিপ ক্রয়ের উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন বিভাগ। এজন্য পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লেখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব গত ১১ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
সূত্র আরও জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সভার কার্যবিরণীর সিদ্ধান্ত সারসংক্ষেপ আকারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে সারসংক্ষেপে তিনি একটি নোট দেন। এতে বলা হয়েছে, ২৬১টি গাড়ি কিনতে কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন? জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে কি কোনো গাড়ি নেই? কোথায় কয়টা গাড়ি আছে? সমাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহার করা গাড়িগুলা আছে এবং সেগুলো কি কি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে জানতে চাই। গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাবে মূল্য উল্লেখ করা হয় নাই কেন?
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয় ও অর্থনৈতিক অধিশাখা থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন সম্বলিত একটি চিঠি জনপ্রশাসন বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৬১টি জিপ কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়। প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে প্রতিটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা উল্লেখ ছিল বলে জানা গেছে। সে হিসেবে ২৬১ টি জিপ ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে যেসব গাড়ির আয়ুস্কাল ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে; তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কর্তৃক ২৬১টি জিপ গাড়ি ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিগত দুই বছর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কোনো প্রকার যানবাহন ক্রয় করেনি।
সূত্র আরও জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ২৬১টি জিপ ক্রয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটে ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে ২৬১টি জিপ ক্রয়ের জন্য (ট্যাক্স,ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনসহ অনূর্ধ্ব ২৭০০ সিসি) ওই টাকা ব্যয়ের সম্মতি দেওয়া হয়। পরে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ট্যাক্স, ভ্যাট, রেজিস্ট্রেশন এবং সব ধরনের অতিরিক্ত ফি, অন্যান্য তথ্যাদিসহ এবং জিপ গাড়িগুলোর কারিগরি মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে কারিগরি টিম কর্তৃক প্রি-শীপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) এর জন্য গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ সফর, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেকানিকালদের ট্রেনিং ও গাড়ি মেরামতের জন্য ১০টি স্ক্যানারসহ গাড়িগুলো সরবরাহের সময়সীমা এবং জিপের মেক, মডেল, তৈরির সন উল্লেখ করে দরপ্রস্তাব দাখিলের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ২৬১টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ গাড়ির দাম (ট্যাক্স, ভ্যাট ও এক্সেসরিজসহ ২৪৭৭ সিসি) ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি (সার্ভিস চার্জসহ) প্রতিটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকাসহ মোট ৩৮৫ কোটি ৭১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা অফার করে। অফারে কার্যাদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ৬১টি জিপ এবং অবশিষ্ট ২০০টি জিপ ১৮০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সরবরাহের এবং জিপ গাড়িগুলোর কারিগরি মান যাচাইয়ের জন্য কারিগরি টিম কর্তৃক ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্ট (এফএটি) গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ সফরের ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মেকানিকদের ট্রেনিং এবং গাড়ি মেরামতের জন্য ৫টি স্ক্যানার সরবরাহের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এর দাখিল করা অফার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে প্রতিটি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপের প্রতিটির মূল্য (ট্যাক্স,ভ্যাট ও এক্সেসরিজসহ এবং রেজিষ্ট্রেশন ফি ব্যতীত) ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে ২৬১ টি জিপ গাড়ি সর্বমোট মূল্য ৩৮০,৬৫,৫৪,৫০০ টাকায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ক্রয়ের বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। পরবর্তীতে প্রতিটি গাড়ির মূল্য ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হিসেবে ২৬১ টি গাড়ির (রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ) মূল্য ৩৮১,৫৮,২০,০০০ টাকা অফার দাখিল করে। এতে গাড়ি নির্মাতা সংস্থা ও ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ উভই সম্মত হয়। অর্থাৎ ২৬১টি মিৎসুবিশি পাজেরো গাড়ি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।
তবে ২৬১টি জিপ গাড়ি ক্রয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপে গাড়ির দাম উল্লেখ নাই বলে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। এছাড়া তার অনুশাসনে থেকে দেখা যায় গাড়ি ক্রয়ের বিষয়ে তাকে পুরো তথ্য জানানো হয়নি।