জেলা প্রতিনিধি, নীলফামারী : কয়েক বছরের চেয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে শীত মৌসুমে শীতবস্ত্রের এবার ভালোই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ বছর বিক্রি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
শীতের আগমনে এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে শীতবস্ত্র। চট্টগ্রাম থেকে ট্রাক ও পিকআপে আসা পোশাক দোকানে ও গুদামে জমা হয়। পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা দোকান ঘুরে দামদর করে এসব কিনে নিয়ে যায়। দিনে লাখ লাখ টাকার বেচাকেনা হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অক্টোবর মাসে কেনাবেচা শুরু হয়ে চলে জানুয়ারি পর্যন্ত। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ব্যবসায়ীরা দিনে পোশাক কিনে এলাকায় ফিরতে পারেন। এখানে জ্যাকেটের বেল পাইকারি বিক্রি হয় ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এ ছাড়া কার্ডিগান ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, হুডি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, মাফলার ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, টুপি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা ও কম্বল বিক্রি হয় ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়। বেলভেদে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ করেন পাইকাররা।
কাপড় ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ক্লথ স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘তাইওয়ান, জাপান ও কোরিয়া থেকে বেশি আসে কাপড়ের গাইড। চট্টগ্রাম থেকে এসব কিনে স্বল্প লাভে বিক্রি করি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাকি ও নগদে কিনে নেন। দুই বছর করোনার কারণে লাভের মুখ দেখিনি। এবার লাভের আশা করছি।’
খুচরা মৌসুমী কাপড় ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বলেন, ‘শীতের সময়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করে বাড়তি আয় হয়। অন্য সময় হোটেলে কাজ করি এবং রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। শীতে মহাজনের কাছ থেকে শীতবস্ত্র নিয়ে রেললাইনের পাশে বিক্রি করি। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। বাড়িভাড়া ও দোকানের বাকিও পরিশোধ হয়।’
আকতার হোসেনের মতো কয়েক শত মৌসুমী ব্যবসায়ী নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেললাইনসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বেশ বড় পাইকারি মোকাম গড়ে উঠেছে এ এলাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ফলে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি। রংপুর বিভাগে সৈয়দপুর মাঝামাঝি স্থানে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসাও জমাজমাট।
জয়পুরহাট থেকে আসা নুরুল হুদা বলেন, ‘এবার শীতবস্ত্রের দাম তেমন বাড়েনি। সৈয়দপুরে দাম কম। জ্যাকেট, মাফলার ও টুপি কিনে ট্রেনে এলাকায় নিয়ে যাব।’ স্কুল শিক্ষক কোয়েলিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে কম দামে পোশাক পাওয়া যায়, প্রতি বছর পরিবারের সবার জন্য গরম কাপড় কিনতে আসি।’
হাজী ডিমলা বস্ত্রালয়ের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শীতে বেচাকেনা বেশি হলেও বাকি দিতে হয়। দিন দিন ব্যবসা বড় হচ্ছে। মৌসুমে অন্তত এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেই। এনজিওর ঋণ নিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
পাইকারি ব্যবসায়ী শের আলী বলেন, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ নানান পোশাক সারা বছর বিক্রি হয়। বেশি বিক্রি হয় রেললাইনের পাশে। তবে ঝুঁকি ও উচ্ছেদ আতঙ্ক নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। হকার্স মার্কেট করে দিলে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে।
বস্ত্র মালিক সমিতির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ছয় জন ব্যবসায়ীর এলসি করা আছে। সৈয়দপুরে তারা আমদানি-রপ্তানি করেন। অন্যরা চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে পাইকারি কেনেন। শীতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার কেনাবেচা হয়।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, রেললাইনের ওপর যারা ব্যবসা করেন, তাদের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, তারা আবেদন করলে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহায়তা করা হবে।