জেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর : গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে তুসুকা গ্রুপসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এসব কারখানায় পুরোদমে চলছে উৎপাদন। তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব কারখানায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে সেসব কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা কম।
এদিকে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গাজীপুর মহানগরীর ভোগাড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, জরুনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনার পর তুসুকাসহ ১৩টি পোষাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত সোমবার থেকে কিছু কিছু করে চালু হতে থাকে কারখানা।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল থেকে সবগুলো কারখানা খুলেছে। এসব কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। আবার অনেক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতেও চলে গেছেন।
আন্দোলন ও বিক্ষোভের পর গত ৭ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে শ্রমিকরা। সর্বশেষ ৯ নভেম্বর দুপুরের পর থেকে তুসুকা গ্রুপের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে র্যাব, বিজিবি এবং পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারেন। পরে তুসুকা কারখানার শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও, তারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর পরেই কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুরে এলাকার অনেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
আজ কয়েকটি কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিকরা খুশি কাজ যোগ দিয়ে। গ্রেপ্তারের আতঙ্ক নিয়েই তারা কাজে যোগ দিয়েছেন।
তুসুকা কারখানার আয়েশা নামে এক সুয়িং অপারেটর বলেন, কারখানা বন্ধ ছিল। অনেক ভয়ে ছিলাম। আমরা কাজে যোগ দিয়েছি। আমাদের যেন হয়রানি করা না হয়। আমাদের কাজ করেই খাইতে হবে। বেতন যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা দিয়েই চলতে চেষ্টা করবো। বাড়ির মালিকরা বাসা ভাড়া বাড়াতে চাচ্ছেন। যদি তারা বাড়ি ভাড়া বাড়ান তাহলে সমস্যা হবে।
তুসুকা কারখানার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারখানা সকাল থেকে যথারীতি চালু হয়েছে। পুরোদমে চলছে উৎপাদন। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে আমাদের শ্রমিকদের যাতে কোনো হয়রানি করা না হয়। আমরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খবর দিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে শুরু করেছি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তর (অপরাধ) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান বলেন, আজ সব কারখানা খুলে দিয়েছে। আমরা আশা করছি শ্রমিকেরা আর আন্দোলন করবে না। তবুও, সব যায়গায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সব মামলা আমরা তদন্ত করছি। যেসব কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে সেই সব কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছি। সাধারণ শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সরকারের মজুরি বোর্ড থেকে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঘোষিত সেই বেতন প্রত্যাখ্যান করে আবার বিক্ষোভ, কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটনায়। এঘটনায় এখন পর্যন্ত শ্রমিক ও পুলিশ সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।