নিজস্ব প্রতিবেদক : পৃথক ৪টি ক্রয় প্রস্তাবে ১ লাখ ২০ হাজার মে. টন সার আমদানিসহ ১৭ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৬৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটি সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
তিনি বলেন, আজকে সভায় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয়ের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৬টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টেবিলে ২টি প্রস্তাব উপস্থাপনসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি প্রস্তবনা ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১৭টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫৯ কোটি ১০ লাখ ৭৬ হাজার ১৪২ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৬ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ১২তম লটে ৩০ হাজার মে. টন টিএসপি সার আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি মে. টন টিএসপি সার ৪১০ মার্কিন ডলার হিসেবে এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
সাঈদ মাহবুব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ১০ম লটে ৪০ হাজার মে. টন ডিএপি সার আমদানিরও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ২৫১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার মে. টন মসুর ডাল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য এই ডাল কেনা হচ্ছে। দরপত্রে অংশ নিয়ে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স রায় ট্রেডার্স এই ডাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ১০০.৯৯ টাকা হিসেবে এতে ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে এই সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের বরিশালের চর কাউনিয়া থেকে ভোলা ইলিশা ফেরিঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউ-০৩ এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি । প্রকল্পটি যৌথভাবে রানা বিল্ডার্স এবং ওয়েস্টার কন্সট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের চুক্তি মূল্য ছিল ৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪ হাজার ৪৭৭ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় ডিপিপি সংশোধন হওয়ায় পূর্ত কাজ বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩৩ কোটি ৬২ লাখ ৬৪ হাজার ৭২ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
তিনি বলেন, ঢাকা স্যানিটেশন ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-৬ এর আওতায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। ৫টি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সিআরইসি-ি৪ এবং এআরআইডিওডি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ৩০৪ কোটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৭০ টাকা।
সভায় ‘ঢাকা স্যানিটেশন ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-৬ই এর আওতায় পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে সিসিএিসইবি, সিএনএমইডিআরঅঅই এবং আরপিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৪৯ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ২৬৮ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব বলেন, ‘কৈলাশটিলা ৮নং কূপ খনন’ ডিরেকশনাল ড্রিগিং সার্ভিস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১ লাখ ৮ হাজার ৪৭৬ মার্কিন ডলার ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
সভায় একই প্রকল্পের কোর অ্যান্ড পিভিটি অ্যানালাইসিস সার্ভিসেস বৃদ্ধির ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। এই কাজে মেসার্স প্যান টেরা জিও কনসালট্যান্টস বি.ভি’র সঙ্গে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৯ মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে গ্যাস আবিষ্কারের সম্ভাবনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও খননের প্রয়োজন হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২০ হাজার ১০৭ মার্কিন ডলার ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টেবিলে ২টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে তুরস্ক থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানি করা হবে। প্রতি কেজি ১০২.১৩ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে ১১ হাজার কেজি মসুর ডাল সংগ্রহ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি কেজি ১০০ টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১১০ কোটি টাকা।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।