ডেস্ক রিপোর্ট : পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বৃদ্ধি পেলে ২০৩০ সালে আরও তিনটি বিপর্যয়কর টিপিং পয়েন্ট দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। এজন্য জীবাশ্ম জ্বালানিকে দায়ী করে তারা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর কথা বলছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৮) বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন বিশ্বের ১২০ জন বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণের ফলে পৃথিবী উষ্ণতা, বন্যা, বরফ গলাসহ পাঁচটি বিপর্যয়কর জলবায়ু টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।
২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ২০২৩ সালে কার্বন নির্গমন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তারা জানান, কার্বন নির্গমন পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে গত দুই বছরে আরও অবনতি হয়েছে। এই নির্গমনের পরিমাণ এ বছর ৪০ দশমিক ৯ গিগা টনে গিয়ে পৌঁছাবে।
এদিন ক্লাব অব রোমের ৭৫ জন বিজ্ঞানী কপ নেতাদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তারা কপ প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। একটির সঙ্গে অন্যটি জড়িত। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই।
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের বিকল্প নেই। ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু শূন্য কার্বন নির্গমন নিশ্চিত করলেই হবে না, বরং ওই সময় পর্যন্ত বিশ্বে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকবে, তা শোষণ করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে এসব রিপোর্ট পরিবেশবাদীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা দিনভর জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের ভেতরে নানা স্লোগানে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে জলবাযু সম্মেলনের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের দাবি হলো, এবারের জলবায়ু সম্মেলনেই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
এদিকে কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের জানান, চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পাঁচ দিনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থের মধ্যে ৮৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি জমা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই পাঁচ দিনে ১১টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিশ্রুত অর্থ আদায় হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই কাজগুলো নতুন যুগ রচনা করবে। চুক্তিগুলোর মধ্যে আছে—খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রথম ঘোষণা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পগুলোকে ডিকার্বোনাইজ করার উদ্যোগ।