নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে দেশে কার্যরত সব নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হযেছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গত ৩ ডিসেম্বর ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২২ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালনের জন্য দেশের ফাইন্যান্স কোম্পানিকে নির্দেশনা দেওয়া হলো।
ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৪১(২)(ঘ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
গত ২২ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে গত ৩ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রশাসন শাখা থেকে বলা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পত্রটি নির্দেশক্রমে অগ্রায়ন করা হলো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ২২ নভেম্বর জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সকলের জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সম্পাদনের জন্য সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তথা সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে থেকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রিজাইডিং অফিসার বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করার প্রয়োজন হবে। সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষককে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ ছাড়াও নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ভোটকেন্দ্র হিসেবে এবং প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা প্রয়োজন হবে।
নির্বাচন কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। অতীতেও তারা নির্বাচনের কাজে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাগণের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাচনি কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৩ নং আইন) আছে। এতে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তিনি তার নিয়োগের তারিখ থেকে নির্বাচনি দায়িত্ব অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত তার চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে চাকরিরত আছেন বলে গণ্য হবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এবং ক্ষেত্রমতে রিটার্নিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন এবং তিনি তার যাবতীয় আইনানুগ আদেশ বা নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। প্রেষণে চাকরিরত থাকাকালে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব প্রাধান্য পাবে। এমতাবস্থায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে রিটার্নিং অফিসারের যেকোনো নির্দেশ জরুরি ভিত্তিতে পালন করার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৬ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা প্রদান সরকারের নির্বাহী কর্তপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের একটি আবশ্যিক পালনীয় দায়িত্ব। এছাড়া, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৪৪৫ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচনি সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া উক্ত অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না।
এমতাবস্থায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে -আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজে অর্পিত দায়িত্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে পালন করে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধিদপ্তর বা দপ্তর বা সংস্থা হতে তাদের অধীনস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের অবিলম্বে নির্দেশ প্রদান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে সরকারি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ও বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিও অনুরূপ নির্দেশ জারি করা।
নির্বাচন পরিচালনার কাজ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তথা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাসমূহকে তাদের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচনের কাজে জড়িত আছেন, নির্বাচনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ছুটি প্রদান বা অন্যত্র বদলি করা অথবা নির্বাচনি দায়িত্ব ব্যাহত হতে পারে এমন কোন দায়িত্ব প্রদান হতে বিরত থাকা।
উল্লিখিত নির্দেশনা জারিসহ আনুষঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।