জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে ঠাকুরগাঁও ও এর আশেপাশের এলাকাগুলো। কুয়াশার প্রভাবে ২০ হাত সামনে দেখা দায়। সারাদিন সূর্যের লুকোচুরি খেলায় উত্তরের জেলা গুলোতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। প্রচণ্ড শীতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন।
দেশের উত্তর জানপদের সর্বশেষ জেলা পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। হিমালয়ের অনেক কাছে হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা প্রতি বছরই বেশি হয়। কিন্তু এবার একটু দেরিতে হলেও শীতের আচরণ বেশ দাপুটে। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে শুরু হলেও মাসের শেষ থেকে শীত ও কুয়াশার পরিমাণ বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিসের সূত্র মতে ঠাকুরগাঁও জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এই জেলায় কখনো সারাদিন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে আবার কখনো চলছে হালকা রোদের আশা যাওয়ার ভেলকিবাজি। রাতের বেলায় বৃষ্টির ন্যায় ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে। রাস্তায় চলাচলকারী গাড়িগুলো দিনের বেলাও লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
প্রতিবছর শীতের মৌসুমে বিপাকে পড়ে এই অঞ্চলের নিম্ন ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষেরা। এবারো প্রচণ্ড শীতে সাধারণ মানুষ কাজে যেতে পারছে না। শ্রমিক শ্রেণির এসব মানুষ সন্তান পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। অতিরিক্ত শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতিবছর শীতজনিত রোগে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আর শীত আসলেই শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শীতের মৌসুমে শিশু ওয়ার্ডে রুগীর পরিমান দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তাই শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাড়াতাড়ি শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদেরকে ঠান্ডা না লাগানোর জন্য মায়েদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শীতার্তদের সহায়তায় সরকারিভাবে ইতোমধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রায় এক লক্ষ কম্বল বিতরণের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে।
রায়পুর গ্রামের লতিফুর বলেন, শীতকালে দিনমজুরি কাজ বেশ কষ্টের। তবুও করতে হয়, আমরা করবো। কিন্তু আরেকটা সমস্যা হলো, এই সময় কাজও কম। তাই অনেক সময় কাজ ছাড়াই বসে থাকতে হয়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা গ্রামের সফিকুল বলেন, হঠাৎ কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গিয়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমরা যারা দিনমজুরের কাজ করি তাদের জন্যে সময়টা অনেক কঠিন। মানুষতো কম্বল বিতরণ করে, পেটে ক্ষুধা নিয়ে শুধু কম্বলে কি হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, জেলার শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের জন্য কম্বল বিতরণ শেষের দিকে। প্রায় ১ লক্ষ কম্বল বিতরণের লক্ষমাত্রা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সাথে কথা বার্তা চলছে। দুইটা বেসরকারি সংগঠন আমাদের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করেছে।