আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার ১২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিত উদ্ধার হলেন ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা নারী। তাকে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটিতে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৯০ বছর বয়সী ওই নারী ভূমিকম্প আঘাত হানার পাঁচদিন পরেও ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে ছিলেন। নতুন বছরের প্রথম দিনেই শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের আঘাতে কেঁপে ওঠে জাপান।
গত সোমবার (১ জানুয়ারি) জাপানের প্রধান দ্বীপ হোনশুতে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পের জেরে দেশটিতে সুনামিও আঘাত হানে। ভূমিকম্পের ১০ মিনিটের মধ্যে ইশিকাওয়ার ওয়াজিমা শহরে ১.২ মিটার (প্রায় ৪ ফুট) উচ্চতার ঢেউ আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন স্থানে বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে, ভবনে আগুন ধরেছে এবং রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল জাপানের মধ্যাঞ্চলীয় নোটো দ্বীপে।
ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের উপকূলীয় শহর সুজুর মাসুশিরো ইজুমিয়া জানিয়েছেন, সেখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ি সম্পূর্ণ বা প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। লোকজনকে খাবার, পানি এবং কম্বল সরবরাহ করেছে জাপানের সামরিক বাহিনী। জাপান সরকার বলছে, ৫৭ হাজার ৩৬০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে জাপানের ফুকুশিমা প্রিফেকচারের দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনা ছিল এই দাইচি পরামাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া।
অনেকেই বলছেন, এবারের ভূমিকম্প তাদের ২০১১ সালের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। গত আগস্টে জাপানের হোক্কাইদো শহরে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ওই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৬ কিলোমিটার গভীরে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমের বেশ কিছু ফুটেজে দেখা গেছে উদ্ধারকর্মীরা ওই নারীকে উদ্ধারের স্থানের চারপাশে নীল রঙয়ের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। সে কারণে ওই নারীকে দেখা যায়নি এবং তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন আছে সেটাও পরিষ্কার নয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ধরনের দুর্যোগের ৭২ ঘণ্টা পরে কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে খুবই কম। তবে অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন ওই নারী। কিন্তু এখনও প্রায় ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ওয়াজিমা শহরে। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ২৭ জনের অবস্থা গুরুতর।