আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গুজরাটে ২০০২ সালে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানু। ঘটনার পর ধর্ষণের অভিযোগে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও গুজরাট সরকার ২০২২ সালে বিশেষ আদেশে তাদের ছেড়ে দেয়। পরে সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন বিলকিস বানু।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, প্রায় বছর খানেকেরও বেশি সময় ধরে শুনানি চলার পর আজ সোমবার স্থানীয় সময় সকালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায় দিয়েছেন। ধর্ষকদের মুক্তিদানের বিরোধিতা করে বিলকিস বানু যে আবেদন করেছিলেন তা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে ১১ ধর্ষকের মুক্তির সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের ফলে মুক্তি পাওয়া ধর্ষণকারীদের আবার কারাগারে ফিরতে হবে। তাদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিলকিস বানুর জন্য এই রায় বিরাট অর্জন এবং গুজরাট সরকারের জন্য বড় ধাক্কা।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানান, বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের আগাম মুক্তি দেওয়ার অধিকার গুজরাট সরকারের নেই। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা মহারাষ্ট্র সরকারের রয়েছে। কারণ, মহারাষ্ট্রে বিলকিস মামলার শুনানি চলেছিল, গুজরাটে নয়।
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, বেশ কিছু বিভ্রান্তমূলক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্তরা গুজরাট সরকারের কাছে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিল এবং গুজরাট সরকার আদালতের কাছ থেকে এই বিষয়ে কোনও অনুমতিও নেয়নি। ফলে গুজরাট সরকার অভিযুক্তদের মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অবৈধ।
বিচারপতি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া তাদের রায়ে জানান, ওই মুক্তিদানের বিরোধিতা করে বিলকিস বানু যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তা যুক্তিযুক্ত বলেই গ্রহণযোগ্য।
২০০২ সালের ৩ মার্চের এক সহিংস ঘটনায় বিলকিস বানু গুজরাটের দাহোদ জেলার লিমখেদায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ওই সময় তার ৩ বছরের কন্যাসন্তান সালেহাসহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়। সেই সময় বিলকিস বানুর বয়স ছিল ২১ বছর এবং তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। বিলকিস বানু পরে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন তাকে ধর্ষণ করা ১১ জনই তার আশপাশের প্রতিবেশী।
২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে বম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট তাদের সাজা বহাল রাখে।
২০২২ সালের ভারতে স্বাধীনতা দিবসের দিনে বিলকিস বানুর ১১ ধর্ষককে মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। মুক্তির পর সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বিজেপি নেতারা তাদের বরণ করেছিলেন। মুক্তি পাওয়া এক ধর্ষক রাধেশ্যাম শাহ মুক্তির পর আদালতে ফের আইনজীবীর পেশায় ফিরে গিয়েছিলেন। তাদের পক্ষে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ ভালো ভালো মন্তব্যও করেছিলেন। এমন কথাও বলা হয়েছিল, তারা ব্রাহ্মণ, ওই অপরাধ করতে পারেন না। আর গুজরাট সরকারের যুক্তি ছিল, বন্দি অবস্থায় তারা ভালো ব্যবহার করেছিলেন।