ডেস্ক রিপোর্ট : ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার এটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো। সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে এ কথাটি লিখে রেখে যান সূর্য সেন। সূর্য সেন এ দেশের নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে আজও অমর।
সূর্য সেনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ৯০তম বার্ষিকী আজ। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তার সঙ্গী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি চট্টগ্রাম কারাগারে কার্যকর হয়।
এরপর বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এই দুই নায়কের মৃত দেহ বস্তাবন্দি করে জাহাজে করে নিয়ে গিয়ে পাথর বেঁধে বঙ্গোপসাগরের অতল জলে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।
সূর্য সেনের জন্ম ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায়। শিক্ষকতা করার কারণে তিনি ‘মাস্টারদা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এই বিপ্লবী ১৯৩০-এর ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। এর কয়েকদিন পর ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে কয়েকশত নিয়মিত সেনা বাহিনীর সাথে বিপ্লবীদের সম্মুখযুদ্ধ হয়।
এই যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী সাময়িকভাবে পলায়ন করে যা ছিল দেড়শত বছরের মধ্যে ইংরেজ বাহিনীর এদেশের মানুষের কাছে প্রথম সুস্পষ্ট পরাজয়। তাই এই যুদ্ধের ঐতিহাসিক মূল্য অনেক।
১৮ এপ্রিল ১৯৩০, শুক্রবার রাতের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে চট্টগ্রাম রেলওয়ে অস্ত্রাগার, দামপাড়ার পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখলে আসে বিপ্লবীদের। এই আক্রমনে অংশ নেওয়া বিপ্পবীরা দামপাড়া পুলিশ লাইনে সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে সূর্য সেনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সূর্যসেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরূপে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল চারদিন। সূর্যসেন সহ ছয়জন শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবীকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল বিপ্লবীরা যখন জালালাবাদ পাহাড়ে (চট্টগ্রাম সেনানিবাসের পাহাড়) অবস্থান করছিল সে সময় সশস্ত্র ইংরেজ সৈন্যরা তাদের আক্রমণ করে। দুই ঘন্টার প্রচন্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন নিহত হয়।
মাস্টার’দা সূর্যসেন স্থির করেন ২৩ সেপ্টেম্বর (১৯৩২ সাল) ইউরোপীয় ক্লাবে প্রীতিলতার নেতৃত্বে হামলা করা হবে।
২৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রীতিলতা সূর্যসেন-এর নির্দেশে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। হামলায় ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হয়েছিল। গুলিতে আহত প্রীতিলতা দৈহিকভাবে অত্যাচারিত হওয়ার চাইতে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নেন। তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন। মার্চ মাসে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। প্রতিবারই তাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।
সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তকে বিচারের জন্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৫ জুন ১৯৩৩ এ শুরু হওয়া এ মামলায় কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার রায় প্রদানের পর তিনজন বিপ্লবীর পক্ষে কলকাতা হাইকোর্টে আপিলের আবেদন করা হয়। ১৪ নভেম্বর ১৯৩৩ সালে হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড বহাল রাখে। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হয়।