নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের ‘উৎসাহ বোনাস’ (ইনসেনটিভ বোনাস) সংক্রান্ত নতুন গাইডলাইন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ। নতুন এই গাইডলাইনে উৎসাহ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. শাহ আলম সই করা ‘উৎসাহ বোনাস’ নামে এ সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ‘উৎসাহ বোনাস’ কোনো অধিকার নয়, এটি আর্থিক সুবিধা যা পর্ষদের বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়। এ বোনাস দেওয়ার ফলে সরাসরি নগদ অর্থের ওপর চাপ পড়ে এবং হ্রাস পায়। এ কারণে নতুন গাইডলাইন জারি করা হয়েছে। ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ চাইলেও তিনটার বেশি বোনাস দিতে পারবে না।
গাইড লাইনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর্থিক সুবিধা দিতে ২০১৪ সালে খসড়া গাইডলাইন করা হয়। ওয়ার্কিং ফান্ডের ওপর নিট মুনাফার হারের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া সুপারিশ ছিল, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রভিশন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে পরবর্তী প্রদর্শন করছে। ফলে প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলো প্রভিশন ঘাটতি সমন্বয় করলে নিটমুনাফার পরিবর্তে লোকসান হতো বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো সরকারের বিভিন্ন খাতের স্বল্প সুদের ঋণ দেয়, বিনামূল্যে সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদান করে এবং সামাজিক নিরাপত্তবেস্টনী সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা দেয় ফলে তাদের কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সার্বিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকর্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের লক্ষ্যে উৎসাহ বোনাস বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।
নতুন নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়ন হারের ওপর ২০ শতাংশ এবং পরিচালন মুনাফা হারের ওপর ৮০ শতাংশ স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই স্কোরের ভিত্তিতে পরিচালন মুনাফা থেকে উৎসাহ বোনাস বন্টন হবে। ফলে এখন থেকে কোনো ব্যাংক ৫০ এর নিচে স্কোর পেলে কোনো বোনাস দিতে পারবে না। ৫০ থেকে ৬০ স্কোর পেলে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসাহ বোনাস পাবে, ৬১ থেকে ৭০ হলে দেড় মাস, ৭১ থেকে ৮০ হলে দুই মাস, ৮১ থেকে ৯০ হলে আড়াই মাস এবং ৯০ এর বেশি স্কোর হলে তিন মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব বোনাস পাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এতদিন নিট মুনাফা বিবেচনা করে নিজ নিজ ব্যাংকের পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিতো উৎসাহ বোনাস কত হবে। এতে করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা বছরে তিন থেকে চারটি করে বোনাস পেত। নতুন নির্দেশনার ফলে তিনটির বেশি বোনাস দিতে পারবে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
‘উৎসাহ বোনাস’ এ শর্তারোপ করায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, নতুন গাইডলাইনের মাধ্যমে উৎসাহ বোনাস কমানো হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজে আগ্রহ হারাবে।
উৎসাহ বোনাস সংক্রান্ত গাইডলাইন বাস্তবায়ন ও স্কোর নির্ধারনের জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে যদি কেউ এই গাইড লাইনের বাইরে উৎসাহ বোনাস দিতে চায় তাহলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সম্মতি নিতে হবে। ব্যাংকের মোট পরিচালন আয় থেকে মোট পরিচালন ব্যয় বাদ দিয়ে পরিচালন মুনাফা হিসাব করতে বলা হয়েছে গাইড লাইনে।