চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজ ও তার ২৩ নাবিকের ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না। মুক্তিপণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে একটা সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেলেও জাহাজের মালিকপক্ষ বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। তবে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই জাহাজ ও জিম্মিদের উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে বলে শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক চট্টগ্রাম ভিত্তিক কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজ ও জাহাজের নাবিকদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। জাহাজে নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। জলদস্যুরাও নাবিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন।
ঈদের আগে নাবিকরা মুক্ত হবেন কি-না এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, জিম্মি নাবিকদের মুক্ত করার ব্যাপারে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। বীমা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা যাবে না। জিম্মি নাবিকদের মুক্তির দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে আমরা সবাইকে জানিয়ে দেব।
এদিকে, নাবিকদের মুক্তি প্রসঙ্গে আজ শনিবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, জাহাজে যারা চাকরি করে তাদের ঈদের আগে পরে হিসেব করে কোনো ছুটি হয় না। তারা যায় ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য। এই জাহাজ যদি হাইজ্যাক নাও হতো তারা ঈদের আগে জাহাজ ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবার কথা ছিল না। তবে, জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে বহুমুখী প্রচেষ্টা পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা হাইজ্যাক করেছেন তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। নাবিকরা ভালো আছেন। তাদের খাবার-দাবারেরও কোনো অসুবিধা নেই। তারা কেবিনে আছেন। যেহেতু আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে, আমরা আশা করছি সহসা তাদেরকে মুক্ত করা সম্ভবপর হবে।
তিনি আরও বলেন, জিম্মি জাহাজের আশেপাশে বিদেশি জাহাজও প্রস্তুত আছে। আলোচনার পাশাপাশি হাইজ্যাকারদের উপর নানামুখী চাপও রয়েছে। আমরা আশা করছি, সহসা জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হবে। সেজন্য দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়। তবে, এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি রয়েছেন জলদস্যুদের। তারা হলেন- জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।
এদের মধ্যে ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। দুই জনের বাড়ি নোয়াখালী, অন্যরা ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালের বাসিন্দা।