পঞ্চগড় প্রতিনিধি : দুই বিঘা জমিতে শসার আবাদ করেছেন কৃষক হাতেম আলী। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। তবে, কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তিনি। ৪২ কেজি ওজনের শসার বস্তা তিনি বিক্রি করছেন মাত্র ৩০ টাকায়। ফলে উৎপাদন ব্যয় ওঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কামারপাড়া এলাকার এই কৃষকের মতো জেলার অন্য চাষিদেরও কপালে চিন্তার ভাজ। ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ তারা।
জানা গেছ, পঞ্চগড়ে যেই শসা কিছুদিন আগেও পাইকাররা খেত থেকে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। এখন এই খাদ্যপণ্যটি প্রতি মণ ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। অর্থ্যাৎ, প্রতি কেজির দাম এক টাকারও কম পাচ্ছেন চাষিরা। অনেকেই জমি থেকে শসা ওঠানো বন্ধ রেখেছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং ও মোকামে দাম না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর শসার আবাদ হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয় শসা। বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় পাইকাররা কৃষকের খেত থেকেই শসা কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। কিন্তু, এবছর ন্যায্য দাম না পেয়ে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, এলাকায় এক ধরণের পাইকারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করেন। ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি খুচরা ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) কথা হয় শসা চাষি হাতেম আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু, দাম পাচ্ছি না। এখন যে দাম চলছে, তাতে শ্রমিকদের মুজুরি খরচই উঠছে না।’
হাড়িভাসা ইউনিয়নের পাইকানিপাড়া গ্রামের চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। সার, কীটনাশকের দামও অত্যাধিক। উৎপাদিত ফসলের দাম মিলছে না। ৪২ কেজি ওজনের শসার বস্তার দাম ৪২ টাকাও মিলছে না।’
দেলোয়ার, আলম, হাসিবুল ইসলামসহ কয়েকজন পাইকারি শসা ব্যবসায়ী বলেন, কয়েকদিন আগেও আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি শসা ২০-২৫ টাকা দরে কিনেছি। সেই শসার এখন দাম নেই। কারণ হিসেবে তারা বলেন, তখন শসার চাহিদা বেশি ছিল। কিন্তু এখন চাহিদা কম। মোকামে দাম বাড়লে কৃষকেরাও ভালো দাম পেতো।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদেক বলেন, এবছর পঞ্চগড়ে ২১৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। শসার দাম হঠাৎ একেবারে কমে আসায় আগামী মৌসুমে চাষের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।