ফেনী প্রতিনিধি : তীব্র তাপদাহে নাকাল শহরবাসী। অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও নারীরা। অধিকাংশ শিশুরোগী জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সিট না পেয়ে অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
শনিবার দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনীয়ার বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘গত ৩ দিন আগে অতিরিক্ত জ্বর নিয়ে নাতনিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পরীক্ষায় নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে৷ সিট না পেয়ে ওয়ার্ডের বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।’
রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় ১১ মাস বয়সী মেয়েকে গত পরশু হাসপাতালে এনেছি। ওয়ার্ডে রোগী থাকার মতো অবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে খোলা জায়গায় বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
কুঠিরহাট থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিবি আমেনা। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে যে সংখ্যক রোগী একটি মাত্র ওয়ার্ডে কোনোভাবেই এত রোগীর চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব নয়। জায়গা না থাকায় অনেক রোগী বাধ্য হয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।’
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ২৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০৪ জন। এ ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, ‘শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত। গত কয়েক দিনের গরমে রোগীর চাপ বেড়েছে। শয্যার অধিক রোগী হওয়ায় আমাদের জন্য চাপ হলেও সেবা নিশ্চিত করছি।’
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৭ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩২ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু। গত ৩/৪ দিনে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন করে নারী ও শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে বলে জানান দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আনোয়ারা বেগম। একইচিত্র হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডেও। শনিবার মহিলা ওয়ার্ডে ২৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগী ৮০ জন। পুরুষ ওয়ার্ডে ২৬ বেডের বিপরীতে রোগী ৫৭ জন।
গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহিঃবিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে। বহিঃবিভাগে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ রোগী বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ শিশু ও নারী রোগী। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ শিশু রোগী আউটডোর চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ। প্রতিটি ওয়ার্ডেই অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেড না থাকায় অধিকাংশ রোগীকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ভর্তির সময়ই বেড সংকটের কথা রোগীদের বলে দেয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শনিবার (২০ এপ্রিল) ফেনীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় গত ১৩ এপ্রিল। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর ফেনীর উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মনিরুজ্জামান।