1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

মূল নায়ক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের চমকে পুঁজিবাজার

  • আপডেট সময় : সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০
  • ৩৪৫ বার দেখা হয়েছে
bsec

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বে  দীর্ঘদিন ধরে  ধুঁকতে থাকা পুুঁজিবাজার  করোনার মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে পুুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দূর হয়েছে।বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে ৪৯ কার্যদিবসেই একের পর এক চমক দেখা গেছে পুুুুঁজিবাজারে। পতনের ধারা কাটিয়ে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে মূল্য সূচকও। তলানিতে নেমে যাওয়া লেনদেনও আবার গতি ফিরে পেয়েছে। ফলে নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বাজার সংশ্লিষ্ঠরা।বিনিয়োগকারীরা আবার পুুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন।

গত ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগদানের পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৩১ মে।সেদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় মাত্র ১৪৩ কোটি টাকা।যেখানে গতকাল একদিনেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৪৩ কোটি টাকার লেনদেন ছাড়িয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকায়।এই সময়ের মধ্যে লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৮৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তিনি যোগদানের ৪৯তম কার্যদিবসেই বাজারের উন্নতির চমক দেখা যাচ্ছে।

নতুন চেয়ারম্যান বিএসইসিতে যোগদানের পর ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।৩১ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি ১৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। যেখানে গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগদানের সময় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে। এসময়ে এ সুচকটি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮৫ পয়েন্ট।যা শতকরা হিসেবে ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বই এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে, যেখানে মূখ্য ভুমিকায় রয়েছেন সংস্থাটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।বাজার আরও ভালো হবে। পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা ছিল আস্থার সংকট। আস্থার সংকটের কারণেই পুঁজিবাজার এতো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।সুশাসন নিশ্চিতে বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরী হয়েছে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেয়া সাহসী পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্লোর প্রাইস তুলে না নেয়া।শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস (প্রতিটি শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর) তুলে নেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বহুমূখী চাপ থাকা সত্তেও সাধারন বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় তাতে কোন কর্ণপাত করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান।

সাধারন বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দূর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি ঠেকানো।ইতিমধ্যেই শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বে থাকা কমিশন সেই রাস্তাও বন্ধ করেছেন।পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা  পর পর সাতটি দূর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হলো-জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং, বি. ব্রাদার্স গার্মেন্টস, বিডি পেইন্টস, বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, আল ফারুক ব্যাগস, ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জেড গ্রুপে থাকা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে আমুল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। বাজারে এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে।সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।

নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরই ঘোষণা দিয়েছিল মন্দ মানের কোনো কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে অনুমতি দেবে না এবং ভালো কোম্পানিকে দ্রুততার সঙ্গে আইপিও অনুমোদন দেবে। এর প্রমাণও মিলেছে। গত এক মাসেই মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত মুনাফাসহ সম্পদের তথ্য দেওয়ায় ৭ টি কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কোনো তদবিরে কাজ হয়নি।একই সঙ্গে ভালো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওয়ালটন ও এনার্জি প্যাকের বিষয়ে কমিশন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবিকে শেয়ারবাজারে আনতে কোম্পানিটির শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছে কমিশন। কমিশনের এসব কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করে তুলেছে।

অবশ্য মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি পুঁজিবাজার-সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাজারমুখী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। তিনি দায়িত্বশীলদের বোঝাতে সক্ষম হন, অর্থনীতিকে বেগবান করতে পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই।এমন আলোচনার মধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে থাকা পুঁজিবাজারকে পুনরায় চালু করেন।

দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ৩১ মে চালুর পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী টানতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সহযোগিতা চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও।বিনিয়োগে ফিরতে বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান। অনিয়ম দূর করে মানুষের আস্থা ফেরানোকেই বেশি শুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।।

আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে নূ্ন্যতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে আলটিমেটাম দেয়া। ফলে বেশকিছু কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই সব শেয়ারের দর বাড়তে থাকে, এর মধ্যেই বাজারে লেনদেনের সময়ও বাড়ানো হয়।

বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের অ্যাকাউন্টসহ সব পরিচালকের শেয়ার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে। সিএনএটেক্স এবং তুংহাই নিটিংয়ের সাবেক এমডিসহ তিন পরিচালককে বিনা ঘোষণায় ১২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। তথ্য গোপন করে আইপিওতে আসায় বিবিএস কেবলসের সব পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে, ভবিষ্যতে এমন সব অনিয়ম হলে কঠোর থাকবে বিএসইসি। এতে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী।

এছাড়াও কার্যকর বন্ড বাজার গড়তে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বন্ডে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। গত মাসে দি সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এসব বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। এর বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও বড় অঙ্কের বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহের আবেদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের বড় প্রকল্পের অর্থও বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবে। শরিয়াহ অনুযায়ী বিনিয়োগ করার সুযোগ করতে শিগগিরই সুকুক বন্ড চালুর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারি বিল ও বন্ড যেন পুঁজিবাজারে কেনাবেচা হয়, তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নতুন চেয়ারম্যান গত দুই মাসে বাজার সংশ্লিষ্ঠ নানা পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে অসংখ্য ভার্চুয়াল সেমিনারে কথা বলেছেন। এমনকি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসেও কথা বলেছেন, যা ইতোপূর্বে বিশ্বের অন্য কোনো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এটাকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি বলেছেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে, অচিরেই পুঁজিবাজার তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। পুঁজিবাজারকে পুরোপুরি অটোমেশন করতে পারলে বাজারে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। আইটি মানেই স্বচ্ছতা । অটোমেশন হলে সবার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহজে পাবেন। পুঁজিবাজার সবার জন্য সহজ হবে। পুঁজিবাজার অটোমেটেড করতে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে। অটোমেটেড হয়ে গেলে ২৪ ঘন্টাই শেয়ার কেনা বেচা করা যাবে।

এদিকে বিভিন্ন পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এখনও অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে রয়েছে। অনেকেই তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পেতে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। অনেকেই বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনিই পারবেন আমাদের দেশের পুঁজিবাজারকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে।যা ইতিমধ্যেই তিনি প্রমান করেছেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ