নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। রীতিমতো থৈ থৈ পানিতে ভাসছে পুরো নগরী। সোমবার (২৭ মে) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল রোববার রাত থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয় বৃষ্টি। রাত বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টির পরিমাণও। সোমবার সকালে অতি ভারী বৃষ্টি হয়। আগে থেকেই সমুদ্রে জোয়ারের পানি কর্নফুলী নদীসহ বিভিন্ন খালে ঢুকে পড়েছিল। পরে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানিতে পুরো নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
চট্টগ্রামে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা এইচ এম মোসাদ্দেক জানিয়েছেন, রাতে যখন রেমাল উপকূল অতিক্রম করছিল তখন ভাটা ছিল। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এই ৩ ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, রাতে বৃষ্টি শুরুর পর মধ্যরাতে নগরীর পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরপর সকাল থেকে নগরীর প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, ডিসি রোড, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়। সোমবার দুপুর পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাকলিয়া মিয়া খান নগর এলাকা, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
নগরীর প্রবর্তক মোড় ও মুরাদপুরে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা ও পথচারীদের চলাচল করতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানমুখী লোকজন।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামল বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখি, রাস্তা পানির নিচে। ফলে আর বের হতে পারিনি।
সরেজমিনে নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায়, কোমর সমান পানিতে রিকশা নিয়ে যাচ্ছেন এক রিকশাচালককে। রিকশার যাত্রীরা পাসহ সিটের ওপর উঠে বসেও পানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। আবার অনেক পথচারী আইল্যান্ডের ওপর দিয়ে হেঁটে মোড় অতিক্রমের চেষ্টা করছেন। আইল্যান্ডেও পনিতে তলিয়ে ছিল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মোহাম্মদপুর, নাজিরপাড়া, বিবিরহাট, জিইসি, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, শুলকবহর, চকবাজার, চান্দগাঁও এবং বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। আগ্রাবাদ, বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই খারাপ অবস্থা। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে।
পতেঙ্গার মাইজপাড়া, খেজুর তলা, চরপাড়া,কাঠগড় জেলে পাড়া এবং ইপিজেডের দক্ষিণ হালিশহররে নিচু এলাকা ও আকমল আলী রোডস্থ জেলে পাড়ায় প্রবল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল।
ভারী বর্ষণে ড্রেন উপচে পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, মুরাদপুর এলাকার ড্রেনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। নালা ভরে পানি সড়কের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি বৃষ্টি হওয়াতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, অতি ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দাদের রোববার রাত থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।