নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝড়ের প্রভাব ও গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক সংকেত ব্যবহার করা হয়। এসব সতর্ক সংকেত নিয়ে জনমনে কৌতূহল—কোন সংকেতের কী মানে? কত নাম্বার সংকেত কতটা বিপদের? এ সময় করণীয় কী? প্রস্তুতি কেমন হবে? এগুলো জানা থাকলে দুর্যোগকালে ক্ষয়-ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ঘূর্ণিঝড়ে সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি সতর্ক সংকেত আছে। ১ নম্বর বিপদ সংকেত মানে—উপকূল থেকে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬১ কিলোমিটার, যা আকস্মিক সামুদ্রিক ঝড়ের পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ জাহাজ বা বড় নৌকা ছেড়ে গেলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।
১ নম্বর সংকেতের মতো ২ নম্বর সংকেতও উপকূল থেকে দূরের সামুদ্রিক অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। সাগরের গভীরে সৃষ্ট ঝড়ে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এতে তাৎক্ষণিকভাবে বন্দর ঝড়ের কবলে পড়বে না। তবে, কোনো জাহাজ ছেড়ে গেলে মাঝপথে বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। ট্রলার বা মাছ ধরার নৌকাগুলো উপকূলের কাছাকাছি থেকে চলাচল করা উচিত। এতে নৌকাগুলো যে কোনো জরুরি অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে দ্রুত পৌঁছাতে পারবে।
৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মানে—ঘূর্ণি বাতাস একটানা ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক ধাক্কা, যার ফলে বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর আশঙ্কা রয়েছে দুর্যোগের কবলে পড়ার। মাঝ সাগরে চলাচলরত অনূর্ধ্ব ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযানগুলোকে অনতিবিলম্বে তীরে ফিরতে হবে।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেদের অর্থ—বন্দর ইতোমধ্যেই ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার গতিবেগের ঘূর্ণিঝড়ে কবলিত। তবে, এ সময়টি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া মতো বিপজ্জনক নয়। সাগরের গভীরে ভেসে চলা ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযানগুলোকে যথাশিগগির বন্দরে ফিরে আসা উচিত। এ অবস্থায় স্থানীয়দের সতর্কীকরণে একটি সংকেত পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাশাপাশি মাইক ও মেগাফোনের মাধ্যমে উচ্চস্বরে স্থানীয়দের হুঁশিয়ার করা হয়।
৫ নম্বর বিপদ সংকেতের সময় ঘূর্ণিঝড় সৈকতকে বামে রেখে উপকূল অতিক্রম করে যায়। ঝড়ো বাতাসের এই যাত্রায় একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটারে উঠতে পারে। ফলে, ছোট বা মাঝারি তীব্র সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়তে পারে উপকূল এলাকা। এই সময় থেকে শুরু হয় দুটি সংকেত পতাকা উত্তোলন করা। এছাড়া, মাইক, মেগাফোন ও পাবলিক এড্রেস সিস্টেম ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হয়।
৬ নম্বর বিপদ সংকেতের ক্ষেত্রেও ৫ নম্বর সংকেতের মতো ঝড়ো হাওয়া গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এই একটানা বেগে গোটা উপকূল অঞ্চল ছোট বা মাঝারি তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে নিপতিত হবে। তবে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের ওপর দিয়ে যাবে সৈকতকে ডানে রেখে। স্বভাবতই এখানে ঝড়ো হাওয়ার ধাক্কাটা বেশি প্রতীয়মান হবে। এ অবস্থায় কোনো নৌযান সাগরে যেতে পারবে না। আর সাবধান বাণীর প্রচার করা হয় দুটি পতাকার মাধ্যমে। ঝড়ের ব্যাপারে স্থানীয়দের অবহিত করতে ব্যবহৃত হয় মাইক, মেগাফোন ও পাবলিক এড্রেস সিস্টেম।
৭ নম্বর বিপদ সংকেতের সময়েও ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে মাঝারি বা ছোট তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে সৈকত। তবে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় ঝড়ো হাওয়ার ধাক্কা সৈকতসহ এর আশপাশের উপকূল এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। এখানেও সতর্কতাস্বরূপ প্রদর্শিত হবে দুটি পতাকা। সতর্ক করা হবে মাইক, মেগাফোন এবং পাবলিক এড্রেস সিস্টেমে।
৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের অর্থ—সৈকতের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা হবে সর্বোচ্চ। ঘূর্ণি বাতাসের অবিরাম গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তারও বেশি। ঝড়টি এই তীব্রতা অব্যাহত রেখেই সৈকত বামে রেখে উপকূল অতিক্রম করে যাবে। এ অবস্থায় স্থানীয় অধিবাসী এবং কোনো নৌযান নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে যেতে পারবে না। এই সময় থেকে শুরু হবে তিনটি পতাকা উত্তোলন। মেগাফোন, মাইক ও পাবলিক এড্রেস সিস্টেমের পাশাপাশি আরও ব্যবহার করা হবে হ্যান্ড সাইরেন।
৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের ক্ষেত্রে সমগ্র উপকূল সর্বোচ্চ তীব্রতর মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হবে। অবিরাম ঝড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভয়াবহ ঝড়টি সৈকতকে ডান দিকে রেখে উপকূলের উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। এ সময় কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ আশ্রয় ত্যাগ করা সমীচীন নয়। এখানে তিনটি পতাকা প্রদর্শনের পাশাপাশি মেগাফোন, মাইক, পাবলিক এড্রেস সিস্টেম এবং হ্যান্ড সাইরেন বাজিয়ে সাবধানতার তাগিদ দেওয়া হয়।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের সময়ে ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের ঝড়ো হাওয়ায় এক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করবে উপকূল জুড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ক্রমশ সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে শুরু করবে। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার কোনো বিকল্প নেই। এখানেও সতর্কীকরণে তিনটি পতাকা প্রদর্শন করা হয়। একইভাবে মেগাফোন, মাইক, পাবলিক এড্রেস সিস্টেম ও হ্যান্ড সাইরেন বাজিয়ে স্থানীয়দের জানান দেওয়া হয়।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত: এটি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ অবস্থান, যেখানে বিপদ সংকেত প্রদানের কোনো অবকাশ থাকে না। সংকেত প্রচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণের সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।