স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে সাড়া দিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত হন। ১০টা থেকে দুদকের পরিচালকরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা সোয়া ১২টা) তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।
গত ৬ আগস্ট দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী ও শেখ মো. ফানাফিল্যা পৃথক চিঠির মাধ্যমে তাকে তলব করেছিলেন। মহামারি করোনাকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তলব করা হয়। আজ ও আগামীকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য নিম্নমানের মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ-পূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য তলব করা হয়।
অন্যদিকে দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে আগামী ১৩ আগস্ট অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে দুদকে তলব করা হয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের প্রতারণার বিষয়ে দুদকে চলমান অনুসন্ধানের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাকে তলব করা হয়েছে।
এছাড়া শেখ মোহাম্মদ ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত অপর এক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. মো. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক মো. ইউনুস আলী, ডা. মো. শফিউর রহমান ও গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলামকে ১২ আগস্ট তলব করা হয়েছে।
চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দুই বছরের চুক্তিতে ছিলেন ডা. আবুল কালাম। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল তার সেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হলে চিকিৎসা কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে সমালোচিত হন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এই মহাপরিচালক। এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমালোচিত হন তিনি।
সর্বশেষ রিজেন্ট হাসপাতালের কেলেঙ্কারিতে সমালোচনায় পড়েন ডা. আবুল কালাম। সরকার রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখাকে (উত্তরা ও মিরপুর) কোভিড চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে। কিন্তু র্যাবের অভিযানে বেরিয়ে আসে হাসপাতালের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের বিষয়টি। এছাড়া নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ দিত রিজেন্ট।
এ নিয়ে সমালোচনার শুরু হলে ব্যাখ্যা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্যাখ্যায় জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
জবাবে আবুল কালাম আজাদ জানান, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম এ বিষয়ে অধিদফতরের পরিচালককে (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার নির্দেশেই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে অধিদফতর।