1. [email protected] : বাংলারকন্ঠ : বাংলারকন্ঠ
  2. [email protected] : বাংলারকন্ঠ.কম : বাংলারকন্ঠ.কম
  3. [email protected] : nayan : nayan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

শাস্তির আওতায় পুঁজিবাজারের ৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

  • আপডেট সময় : শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০
  • ৪২৮ বার দেখা হয়েছে
BSEC-LOGO (2)

পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। গত দুই মাসে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের ৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এতে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যেমন আস্থা বাড়ছে, তেমনি আগ্রহ বাড়ছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও। ফলে পুঁজিবাজারে বাড়ছে তারল্য প্রবাহ, বাড়ছে লেনদেন ও শেয়ারদর।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পুঁবিাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে থাকে। এর ফলে ৫০ কার্যদিবসে একের পর এক চমক দেখা যেতে থাকে পুঁজিবাজারে। অব্যাহত পতনের ধারা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে থাকে পুঁজিবাজার। এতে আশাবাদী হয়ে উঠছেন বাজার সংশ্লিষ্ঠরা। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরাও আবার বাজারমুখী হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগ দেন বিএসইসিতে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৩১ মে। সেদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় মাত্র ১৪৩ কোটি টাকা। এখন সেই লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগদানের সময় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ছিল ৪ হাজার ৬০ পয়েন্টে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে। এ সময়ে সুচকটি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪৩ পয়েন্ট। যা শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১৩.৬৭ শতাংশ।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেয়া সাহসী পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম ছিল ফ্লোর প্রাইস তুলে না নেয়া। শেয়ারের দরপতন ঠেকাতে গত ১৮ মার্চ আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস (প্রতিটি শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর) তুলে নেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বহুমূখী চাপ থাকা সত্তেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় তাতে কোন কর্ণপাত করেননি তিনি।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল দূর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি ঠেকানো। ইতিমধ্যেই শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বে থাকা কমিশন সেই রাস্তাও বন্ধ করেছেন। পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা পর পর সাতটি দূর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন বাতিল করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হলো-জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফেকচারিং, বি. ব্রাদার্স গার্মেন্টস, বিডি পেইন্টস, বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, আল ফারুক ব্যাগস, ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। অবস্থা বেগতিক দেখে দুর্বল কোম্পানিগুলো তাদের আইপিও আবেদন প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে।

দীর্ঘদিন ধরে জেড গ্রুপে থাকা কোম্পানিগুলোর উন্নয়নের লক্ষ্যে আমুল পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে শিবলী রুবাইয়াত কমিশন। গত বৃহস্পতিবার জেড গ্রুপের শেয়ার লেনদেন ও জেড গ্রুপের কোম্পানিতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এতে পুঁজিবাজারে বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা ।

মহামারী করোনার মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি পুঁজিবাজার-সংশ্নিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাজারমুখী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। তিনি দায়িত্বশীলদের বোঝাতে সক্ষম হন, অর্থনীতিকে বেগবান করতে পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই।এমন আলোচনার মধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে থাকা পুঁজিবাজারকে পুনরায় চালু করেন।

দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ৩১ মে চালুর পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী টানতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সহযোগিতা চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও। বিনিয়োগে ফিরতে বড় বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি বিএসইসির চেয়ারম্যান। অনিয়ম দূর করে মানুষের আস্থা ফেরানোকেই বেশি শুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।।

আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে নূ্ন্যতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে আলটিমেটাম দেয়া। ফলে বেশকিছু কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই সব শেয়ারের দর বাড়তে থাকে, এর মধ্যেই বাজারে লেনদেনের সময়ও বাড়ানো হয়।

বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে আরও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান কমিশন। সিএনএটেক্স এবং তুংহাই নিটিংয়ের সাবেক এমডিসহ তিন পরিচালককে বিনা ঘোষণায় ১২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করায় তাদেরকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। তথ্য জালিয়াতি করে আইপিওতে আসায় বিবিএস কেবলসের সব পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করেছে। এছাড়া, অনিয়মের কারণে ব্রোকারেজ হাউজ, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় এনেছে। কমিশনের এসব সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে, ভবিষ্যতে এমন সব অনিয়ম হলে কঠোর থাকবে বিএসইসি। এতে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়াও কার্যকর বন্ড বাজার গড়তে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বন্ডে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। গত মাসে দি সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এসব বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। এর বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও বড় অঙ্কের বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও বন্ড বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহের আবেদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের বড় প্রকল্পের অর্থও বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবে। শরিয়াহ অনুযায়ী বিনিয়োগ করার সুযোগ করতে শিগগিরই সুকুক বন্ড চালুর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারি বিল ও বন্ড যেন পুঁজিবাজারে কেনাবেচা হয়, তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নতুন চেয়ারম্যান গত দুই মাসে বাজার সংশ্লিষ্ঠ নানা পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে অসংখ্য ভার্চুয়াল সেমিনারে কথা বলেছেন। এমনকি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসেও কথা বলেছেন, যা ইতোপূর্বে বিশ্বের অন্য কোনো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এটাকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে, অচিরেই পুঁজিবাজার তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। পুঁজিবাজারকে পুরোপুরি অটোমেশন করতে পারলে বাজারে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। আইটি মানেই স্বচ্ছতা। অটোমেশন হলে সবার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহজে পাবেন। পুঁজিবাজার সবার জন্য সহজ হবে। পুঁজিবাজার অটোমেটেড করতে কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই তা দৃশ্যমান হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা বলছেন, পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা ছিল আস্থার সংকট। আস্থার সংকটের কারণেই পুঁজিবাজার এতোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় উ্রদ্যোগের কারণে বর্তমান কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরী হচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ